রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে আলম চৌধুরী পাড়ায় এক গৃহবধূ (২৪) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়। তার লাশ সোমবার গোয়ালন্দে শশুর বাড়িতে আনা হলে স্থানীয়দের আপত্তির মুখে বাবার বাড়ি ফরিদপুরের মাছচর ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামে দাফন করা হয়।
ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি মোর্শেদুল আলমের নেতৃত্বে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডাঃ নুরুল ইসলাম জানান, করোনা আক্রান্তে মৃত্যু ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ওই গৃহবধূর লাশ দাফন নিয়ে চলে নানা বিপত্তি। স্বামীর বাড়ি রাজবাড়ীতে লাশটি নিয়ে যাওয়া হলে স্থানীয়রা লাশ দাফনে বাধা দেয়। পরে তার বাবার বাড়ি ফরিদপুরে লাশ আনা হলে সেখানেও ঘটে একই ঘটনা। স্থানীয়রা প্রবল আপত্তি জানায় তাদের এলাকায় লাশ দাফনে। এলাকাবাসী তো নয়ই, লাশের কাছে আসেননি স্বজনরাও। খবর পেয়ে এগিয়ে আসে ফরিদপুর জেলা পুলিশ। পরে সোমবার মধ্যরাতে তাকে বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামের ওই নারীর বিয়ে হয় পাশের রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে। গত এপ্রিল মাসে রাজবাড়ীতে স্বামীর বাড়িতে অবস্থানের সময়ে করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। গত ১৭ এপ্রিল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ফরিদপুর হাসাপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ হলে গত ২০ এপ্রিল তার স্বামী ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে তাকে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার মারা যান তিনি। তাকে দাফনের জন্য স্বামীর বাড়ী রাজবাড়ী জেলায় নিয়ে গেলে, সেখানকার লোকজন লাশ দাফনে বাধা দেয়।
স্থানীয়দের প্রবল বাধার মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে গৃহবধূর লাশ তার বাবার বাড়ি ফরিদপুরের দয়রামপুর গ্রামে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এখানেও স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে লাশটি দাফনে। তার লাশটি দ্রুত সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয়রা চাপ সৃষ্টি করলে বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় গৃহবধূর স্বজনদের।
এ সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কোতোয়ালি থানার ওসি মোর্শেদুল আলম স্থানীয়দের বুঝিয়ে লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয়রা কেউই লাশটি দাফনে এগিয়ে আসেনি। পরে ওসির নেতৃত্বে এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও চারজন কনস্টেবল গৃহবধূর লাশ দাফন সম্পন্ন করেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোর্শেদুল আলম জানান, গৃহবধূ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে থাকা তার স্বামী, দেবর ও ননদেরা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেনি। রাজবাড়ীর লোকজন তাদের বাড়িতে উঠতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে তারা ওই গৃহবধূর বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানেই তারা ছিলেন। যদিও তার বাবার বাড়িটি লকডাউন করা হয়। সেই সময় থেকে তাদের খাদ্য সামগ্রীসহ সব ধরণের সহায়তা করে পুলিশ।