বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশ থেকে যে লাখো কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, লুট হচ্ছে, ব্যাংক শূন্য হচ্ছে, রাজকোষ শূন্য হচ্ছে- আমরা তো শুধু দুজনের কথা শুনেছি, সাবেক সেনাপ্রধান এবং পুলিশ প্রধান। তাদের যে রূপকথার কাহিনী শুনেছি এরকম আরো যারা সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করেছে, গুম-খুন এবং নানা অত্যাচারে লিপ্ত ছিলেন তাদের কাহিনী তো আমরা জানি না। আমরা না জানলেও কথাগুলো তো মানুষের কাছে আছে।’
মঙ্গলবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা পরিষদের উদ্যোগে আহবাব চৌধুরী খোকনের সম্পাদনায় ‘জিয়াউর রহমান অনন্য রাষ্ট্রনায়ক’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজির আহমেদ- তারা যে এতকিছু করেছেন এটা কি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না? আওয়ামী লীগ সরকার কি কিছু জানত না?’
তিনি বলেন, ‘আজকের আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমান সরকারের কাছে রেজিস্ট্রেশনের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতিও জিয়াউর রহমানের অবদান রয়েছে।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘তাদের অন্তর হচ্ছে মানুষকে নিপীড়ন করা। ওদের অন্তর হচ্ছে ক্ষমতাকে স্থায়ী করে রাজত্ব কায়েম করা। এজন্য তারা উদারতাকে পছন্দ করে না। নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ এটাও তারা প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য তারা জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিদ্বেষ, তারেক জিয়ার প্রতি বিদ্বেষ দেখায়।’
তিনি বলেন, ‘তারা যে গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নন সেটি তারা প্রমাণ করছেন। রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য তাদের মধ্যে কোনো নীতি-নৈতিকতা এবং জনগণের কাছে অঙ্গীকার এরকম কিছুই নেই। তারা রাজনীতিকে একটা প্লট বলে মনে করেন, প্রতারণা বলে মনে করেন। জনগণের কাছে অনেক ওয়াদা করে কিন্তু সেটি না রক্ষা করাকেই রাজনীতি মনে করে।’
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দেড় লাখ বাড়িঘর তছনছ হয়ে গেছে। ১৬ জন মানুষ মারা গেছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে দৃষ্টি যাতে না যায় সেজন্য সরকারপ্রধান পরশুদিন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটা বাজে কথা বলেছেন। জনগণ জলোচ্ছ্বাসে বাঁচলো কি মরলো তার খেয়াল পর্যন্ত তাদের নাই। তাদের টার্গেট হলো যেকোনো মুহূর্তে যেকোন অবস্থায় জিয়া পরিবারকে আক্রমণ করা। ঘূর্ণিঝড়ে মানুষকে আশ্রয় দেয়া, সাহায্য করা, খাবার দেয়া- এগুলোতে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই।’
রিজভী আরো বলেন, ‘এ সরকার কত যে অপকর্ম করেছে, কত যে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যাকেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছে তাদেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এ সরকার নিজেদের লোকগুলোকে অর্থবিত্তে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ করার জন্য নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজকে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে তাদেরকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এই উন্নয়ন লোকদেখানো- সেটা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন চলছে আন্তর্জাতিক গুম দিবসের একটা সপ্তাহ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রত্যেকেই বাংলাদেশে গুম-খুন অত্যাচারের কাহিনী সম্পর্কে রিপোর্ট করছে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতিত্বে সাবেক ছাত্রদল নেতা ডা: তৌহিদুর রহমান আউয়াল সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল প্রমুখ।