করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। সেইসঙ্গে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। করোনা মহামারিতে লকডাউনে থাকা দেশটিতে ভয়াবহভাবে বাড়ছে বেকার সংখ্যাও। এখন পর্যন্ত দেশটিতে বেকার হয়েছেন ৩ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ। আর এই সংখ্যায় পৌঁছতে সময় লেগেছে মাত্র ছয় সপ্তাহ।
দেশটির শ্রম অধিদপ্তর জানিয়েছে, মার্চ থেকেই প্রতি সপ্তাহে বেকার হচ্ছেন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ। বর্তমানে দেশটির কর্মক্ষম গোষ্ঠীর ২০ শতাংশ মানুষই বেকার হয়ে পড়েছেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নেতিবাচক হয়েছে। ২০০৮ সালের চেয়েও বড় মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব হার পৌঁছেছে ১৫ শতাংশে। অথচ দুই মাস আগেই এ হার ছিল মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। যা ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে বেকার ছিলেন ৭০ লাখ মানুষ। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পরই অর্থাৎ গত ছয় সপ্তাহে বেকার হয়েছেন ৩ কোটিরও বেশি। সব মিলিয়ে এখন বেকার সুবিধা পাওয়ার আবেদন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেকার হওয়া এই অংশটি দেশের মোট শ্রমশক্তির ২০ শতাংশ। প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে এ সংখ্যা। দেশের কিছু অংশে লকডাউন শিথিল করার পরও এত বেকার ভাতার আবেদনের মানে হচ্ছে, তারা চাকরি হারিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল ইকনোমিকমের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল অ্যাসওয়ার্থ বলেন, দেশটির কিছু অংশ চালু হতে শুরু করলেও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। এর মানে খুব কম সংখ্যক মানুষই কাজে ফিরছেন। এতে হতাশাও বাড়বে।
ভ্রমণ বন্ধ থাকায় উবার, লিফট ও এয়ারবিএনবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই কর্মী ছাটাই করছে। মেডিকেল, রেস্তোরাঁ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এপ্রিলের তুলনায় বেকারত্ব ১৫ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি বাড়তে পারে। দুই মাস আগে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ; যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও সংকট তৈরি হয়েছিল। এখন করোনা আঘাত হানার পর তার চেয়েও বাজে অবস্থা বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে।
এদিকে, দ্য ন্যাশনাল মাল্টিফ্যামিলি হাউজিং কাউন্সিল জানিয়েছে, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া পরিসেবা বিল পরিশোধে বিলম্ব করছে। এক-তৃতীয়াংশ মানুষও গত মাসে পুরো বিল পরিশোধ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৮৫ জন মানুষ। আর প্রাণ হারিয়েছেন ৭৮ হাজার ৬১৫ জন।