টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট সবগুলো নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে নতুন ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজারও মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এসব এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন ফসলাদি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। ফলে এসব এলাকার মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বিপৎসীমার উপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানিবৃদ্ধির ফলে নিচু এলাকার ঘরবাড়িগুলোতে পানি উঠে প্লাাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। অন্যদিকে তিস্তার পানি আবারও বাড়তে থাকায় সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুরের এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
এদিকে, বুধবার বিকেলে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যা এলাকায় বাঁধের অন্তত ৩০ ফুট এলাকা ধসে যায়। এতে ভরতখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, খামার পবনতাইড়, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বেড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ী, গুয়াবাডী, কালুরপাড়া, কানাইপাড়া, কুমারপাড়া এবং জুমারবাড়ী ইউনিয়নের কাঠুর, থৈকরের পাড়া ও পূর্ব আমদির পাড়াসহ প্রায় ১৫টি মৌজা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার কমপক্ষে সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ জমির পাট, কাউন, তিল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যা কবলিতরা।
সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, তার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী মানুষের এবং গো-খাদ্যের সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জরুরিভাবে এসব এলাকায় বন্যার্ত মানুষসহ গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজনের ঢলে গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।