সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ-ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় তুমুল বৃষ্টিপাত

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪
  • ৫২ বার

শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে অন্তত দুই ঘণ্টার তুমুল বৃষ্টিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এদিন সকালে মানুষের কর্মব্যস্ততা না থাকায় রাস্তায় যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন কাজে যারা ঘর থেকে বের হয়েছিলেন তারা চরম ভোগান্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তুমুল বৃষ্টিপাত ভারতের কলকাতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ঢাকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট আটটি আবহাওয়া স্টেশনে ভারী এবং আটটি স্টেশনে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।

অতিভারী বৃষ্টিপাত হওয়া এলাকাগুলোর মাঝে আছে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া এবং কুষ্টিয়া (কুমারখালী)।

এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে তুমুল বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে সেখানে সতর্কবার্তাও দেখানো হয়েছে।

ঢাকাসহ সারা দেশের চিত্র
সকাল থেকে টানা বর্ষণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং এতে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন ব্যবহারকারীরা।

শামীমা সুলতানা নামে একজন ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে, জলে ডোবা শহরে, ময়লা ফেলি আহারে যেথা ইচ্ছে সেথারে।’

ঢাকা ওয়াসা বা ‘নগরপিতারা’ এখন কোথায়? সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

তার মতো আরও অনেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী ঢাকার এই পানিবন্দী অবস্থার জন্য অনুন্নত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলাকে দুষছেন।

ফেইসবুকের একটি ট্র্যাফিক গ্রুপে আরবাজ শাহবাজী নামক একজন ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন যে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আগারগাঁও, পুরোটা জ্যাম। ‘আর, ধানমন্ডি ২৭-এ কোমর সমান পানি। জায়গায় জায়গায় গারির স্টার্ট অফ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’

শুক্রবার দুপুর ২টার সময় মনোয়ার হোসেন নামক আরেকজন ফেইসবুক ব্যবহারকারী ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল যাওয়ার পথের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সড়কে প্রায় কোমর সমান ময়লা পানি। মানুষ সেই পানিতে ভিজে ভিজেই নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে। কেউ কেউ ময়লা পানি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।

মনোয়ার হোসেন নিজে রিকশায় ছিলেন এবং দেখা যাচ্ছে যে রিকশাওয়ালাকে রিকশা পায়ে হেঁটে টেনে টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে এবং পানি রিকশার দুই চাকার উপরে উঠে গেছে।

তিনি তার ওই পোস্টের ক্যাপশনে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘ঢাকায় আবিষ্কৃত নতুন খাল!’

এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঢাকাবাসীর এই ভোগান্তি সহসা কমছে না। কারণ আগামী ২৪ ঘণ্টা ঢাকাসহ সারাদেশে এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এক্ষেত্রে এটি একটানা না হয়ে থেমে থেমে মাঝারি থেকে অতভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

শুক্রবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো মাত্র এক মিলিমিটার। কিন্তু এদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা, এই তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

হঠাৎ এত বৃষ্টিপাতেই ঢাকার কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বাড্ডা, হাতিরঝিল, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মহাখালী, বিজয় সরণী, মিরপুর ইত্যাদি এলাকার অনেক স্থান পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এর প্রভাব পড়েছে যানবাহনের ভাড়ায় ও যানবাহনের সংখ্যায়। যারা শুক্রবার দিন বিভিন্ন কাজের জন্য ঘর থেকে বের হন, বৃষ্টি এবং যানবাহনের আধিক্য কম থাকায় এদিন তাদেরকে রিকশা, সিএনজি, এমনকি রাইড শেয়ারিং অ্যাপেও কয়েক গুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর গতকালই তাদের সন্ধ্যার পূর্বাভাসে বলেছিল, ঢাকাসহ দেশের সকল বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি, কোথাও কোথাও আবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেইসাথে, বৃষ্টির সাথে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও বজ্রপাতের কোথাও বলা হয়েছিলো।

দেশের সব অঞ্চলে এমন বৃষ্টিপাত হওয়ার পেছনে মূল কারণ মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় অবস্থা।

শুক্রবার সকালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘এমন বৃষ্টিপাত শুধু ঢাকায় না, কম-বেশি সারা দেশেই হচ্ছে। তবে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেশি।’

শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারে, ৩০৯ মিলিমিটার এবং তারপরই রয়েছে সন্দ্বীপ। এই সময়ে সন্দ্বীপে ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাকী ছয় অতিভারী হওয়া স্টেশনে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বা কাছাকাছি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

যখন ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়, তখন সেটিকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত বলে।

আবহাওয়াবিদ কবির আরো জানিয়েছেন, সিলেটে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

কিন্তু ঢাকার মতো সিলেটেও এদিন ভোর ৬টা থেকে ৯টার মাঝে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গেছে। সিলেটে এই তিন ঘণ্টায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তবে সিলেটের বৃষ্টিপাতকে স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, ‘এই সময়ে এরকম বৃষ্টিপাত সবসময়ই সিলেটে দেখা যায়। এটা স্বাভাবিক।’

এমনিতে, এখন আষাঢ়ের শেষভাগ চলছে। আর, এসময় এরকম বৃষ্টি স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। ‘কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত কমে গিয়েছিলো। আজকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণটা একটু বেড়ে গেছে। বর্ষাকালের এই বৃষ্টিপাত অস্বাভাবিক নয়।’

ভারতেও ‘বর্ষাকালীন’ ঝুম বৃষ্টি
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে তো বলাই হয়েছে যে মৌসুমি বায়ু পাশের দেশ ভারতেও সক্রিয়।

ভারতের কলকাতার বিবিসি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার মাঝ রাত থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিকের একাধিক জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

কলকাতাসহ, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়াতে বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস আগে থেকেই ছিল।

সেই পূর্বাভাস মেনে শুক্রবার ভোর রাত থেকে কলকাতা ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য সেখানকার ১৫টি জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়া, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদাতেও হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিকের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতিকে ঘিরে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।

সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সাথে আগেই বৈঠক করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার বিষয়ে পর্যটকদের সতর্ক করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি সিক্কিমের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা।

বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি ও অন্যান্য
আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়েছে, আজ দিনভর বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আগামী ২৪ ঘণ্টা পর অর্থাৎ কাল থেকেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তুলনামূলক কমে আসবে। এই সময় তাপমাত্রাও খানিকটা বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ কবির।

কিন্তু আজকে যেহেতু দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি কোথাও কোথাও পানি বিপদসীমার উপর দিকে অতিক্রমও করছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র’র (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

‘গতকালের আগের তিনদিন বন্যা পরিস্থিতি মোটামুটি উন্নতি হয়েছিলো। গতকাল থেকে পানি আবার অল্প পরিমাণে বেড়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে পানি আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।’

গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের কানাইঘাটে সর্বোচ্চ ৪০ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বেড়েছে। ‘আজকে যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বাড়বে সামান্য,’ তিনি বলেন।

এর বাইরে, ভারী বৃষ্টিপাত হলে সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাতে ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকে বলে পাহাড়ের নীচের ও আশেপাশের বাসিন্দাদেরকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

এখানে উল্লেখ্য, কক্সবাজারের টানা ভারি বর্ষণের ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে পাহাড় ধসে দুই শিশুসহ চারজন নিহত ও তিনজন আহত হওয়ার খবর এসেছে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com