ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরু করার প্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশে পুলিশ ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসহ ব্যাপক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা প্রদান করবে।
বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের প্রধান গুয়েন লুইস রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) এখানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সময় এই আশ্বাস দেন।
বৈঠকে তারা সংস্কার, দুর্নীতি, বন্যা, রোহিঙ্গা সংকট এবং জুলাই-আগস্ট মাসে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে তদন্ত নিয়ে আলোচনা করেন।
গুইন লুইস অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসকে বিপ্লব-পরবর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে ‘অসাধারণ ভূমিকা নেয়ার জন্য’ ধন্যবাদ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন সমগ্র জাতির জন্য ‘সর্বাধিক ঐক্যের মুহূর্ত’ এবং তার সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য ‘একটি নজির স্থাপন করা’।
তিনি বলেন, ‘এখন অর্থনীতি সংস্কার এবং প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পথে নিয়ে আসার লক্ষ্যে দেশের জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ।’
গুয়েন লুইস পুলিশ প্রশাসনসহ নিরাপত্তা বাহিনীতে সংস্কারের বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীর সংস্কারকে তার অগ্রাধিকারের শীর্ষে রেখেছে।
তিনি বলেন, সরকার একটি সমন্বিত জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা দেশে হয়রানি ও দুর্নীতি কমিয়ে আনবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের জন্য একটি কমিশনও গঠন করেছে যাতে অবাধে ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
লুইস বলেন, জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বাধীন তদন্ত দল ইতোমধ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডবের বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন এজেন্সি, ডব্লিউএইচও এবং আইএলও আন্দোলনকালে আহতদের ও তাণ্ডবের ঘটনার দ্বারা যারা মর্মাহত হয়েছে তাদেরকে সাহায্য করার উপায় খুঁজছে।
জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, জাতিসঙ্ঘ দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য ৪ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে বাংলাদেশে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ বন্যাদুর্গতদের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও দাতব্য সংস্থার সহায়তা কর্মসূচি সমন্বয় করছে।
অধ্যাপক ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ায় বন্যার জন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করতে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চেয়েছেন।
তারা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। লুইস তিন পার্বত্য জেলায় জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলো যেসব সেবামূলক কাজ করেছে তার রূপরেখা তুলে ধরেন।
প্রফেসর ইউনূস ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শিশুদের একটি ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে জাতিসঙ্ঘের সাহায্য কামনা করে বলেছেন, ‘এখানে ক্ষুব্ধ তরুণদের একটি পুরো প্রজন্ম বেড়ে উঠছে।’
সূত্র : বাসস