বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন

৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ১০৮ কোটি টাকা জমা

বিডি ডেইলি অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬ বার

গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে এ বৈঠকে দ্বিতীয় সভার কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্তসমূহের অগ্রগতির পর্যালোচনা, গণঅভ্যুথান সংক্রান্ত বিশেষ সেল ও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমসম্পর্কিত আলোচনা, গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সহায়তার জন্য মেডিক্যাল সাপোর্ট টিম, আইসিটি সাপোর্ট টিম, লিগ্যাল সাপোর্ট টিম গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া আজকের সভায় ফাউন্ডেশনের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের অনুমোদন, নির্বাহী পরিষদ গঠন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে।

এর মধ্যে ৩৬৫ জন শহীদ পরিবারকে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও ৭৭৫ জন আহতদের ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা অর্থাৎ মোট ১১৪০ জনকে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা বিকাশ ও ক্রসচেকের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মো: জালাল উদ্দীনকে চেয়ারম্যান করে মেডিক্যাল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছেন।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে থাইল্যান্ডে ও তিনজনকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আরো দু’জন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া আহত আরো সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জালাল উদ্দীন আরো বলেন, এখন পর্যন্ত আহতদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কয়েকটি স্পেশাল মেডিক্যাল টিম এসেছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাজ্য থেকে দু’জন বিশেষজ্ঞ, ফ্রান্স থেকে একজন বিশেষজ্ঞ, থাইল্যান্ড থেকে ছয়জন বিশেষজ্ঞ ও চীন থেকে ১০ জন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে এসে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো পরিদর্শন, অস্ত্রোপচার সম্পন্ন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর কাছে সহযোগিতা চাওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ‘গুরুতর আহত যারা তাদের বিস্তারিত মেডিক্যাল হিস্ট্ররির রিপোর্ট তৈরি করে দূতাবাসগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন দূতাবাসের অনেক কর্মকর্তারা জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছিলেন তাদের আহতদের ব্যাপারে সহানূভুতি আছে। নিশ্চয়ই তারা আমাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করবেন।’

অতিদ্রুত আহতদের বিস্তারিত মেডিক্যাল হিস্ট্রির রিপোর্ট তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ, শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামানসহ শহীদ পরিবারের ১৪ জন সদস্য অংশ দেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্মমভাবে গুলিতে নিহত সন্তানের লাশ উদ্ধার থেকে দাফন পর্যন্ত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তারা অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকাররের পরামর্শ দেন এবং জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা কিছু সময়ের জন্য আমাকে আপনাদের অনুভূতি জানিয়েছেন। সন্তান ও ভাই-বোন হারানোর যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা এটি মহাকাব্য। এই অল্প সময় এটি প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার নেই। যারা শহীদ হয়েছে তারা একেকটি পরিবার থেকে এসেছে। আপনারা, আপনাদের পরিবার এমন একেকজন মানুষ তৈরি করেছে যারা এতখানি দুঃসাহস নিয়ে অধিকারের কথা বলেছে। আমি এই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই এবং একইসাথে আপনাদেরও, শহীদদের পরিবারের সকলকে শ্রদ্ধা জানাই।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্য আহত ও নিহতদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে যেন পালন করা যায়। এটা আপনাদের ফাউন্ডেশন। আপনারা সরাসরি যুক্ত হন, পরামর্শ দেন, নিজের মতো করে গড়ে নেন।’

সভায় নির্বাহী পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো: সারজিস আলম, অর্থ সম্পাদক হিসেবে মোহা. আহসান হাবীব চৌধুরী এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে অ্যাডভোকেট মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি ও ডা. তাসনিম জারাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট, ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম শাহীনকে প্রধান করে একটি লিগ্যাল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি ছয় সদস্যের গভর্নিং বডি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, কাজী ওয়াকার আহমাদ, নূরজাহান বেগম, শারমীন এস মুরশিদ, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com