ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে বরগুনায় ২৬৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মূল্য ছয় কোটি ১৬ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিন হাজার ৪৫ জন কৃষক। জেলায় ১৬ হাজার পাঁচ শ’ ৮৪ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ২০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে ভুট্টা, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, তিল, মরিচ, সবজি, পান, কলা, পেঁপে ও আম রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় ভুট্টা আবাদ করা হয়েছিল ছয়শ পাঁচ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আগে ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি ১২১ হেক্টর জমির ভুট্টা। চিনাবাদাম আবাদ করা হয়েছিল এক হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আগে ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি ৬৫৭ হেক্টর জমির চিনাবাদাম। ফলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হেক্টর জমির চিনাবাদাম। সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছিল এক হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আগে ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি ২৭৩ হেক্টর জমির সূর্যমুখী। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হেক্টর জমির সূর্যমুখী।
তিল আবাদ করা হয়েছিল ১০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আগে ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি ৯৯ হেক্টর জমির তিল। সবজি আবাদ করা হয়েছিল দুই হাজার আট শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে। ঘূর্ণিঝড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মরিচ আবাদ করা হয়েছিল ৬৭ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানের বরজ আছে ৪৫০ হেক্টর জমি জুড়ে। যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলার বাগান আছে ২১০ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে ২৪ হেক্টর জমির কলা বাগান।
পেঁপে আবাদ করা হয়েছিল ৭৯ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে ২০ হেক্টর জমির পেঁপে। এছাড়া আমের বাগান আছে এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। এসব বাগান ঘূর্ণিঝড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খেজুরতলা গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দীন বলেন, ২০ শতাংশ জমিতে চিনা বাদাম আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ও এর ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।
সোনার বাংলা গ্রামের কৃষক ইউনুস জোমাদ্দার বলেন, আমি ৪০ শতাংশ জমিতে তিল চাষ করেছিলাম। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেতে পানি ঢুকে ছিল। পরে পানি নেমে গেলেও ক্ষেতের গাছ শুকিয়ে যায়।
সদরের সবজি চাষি আবুল কালাম বলেন, তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে এ বছর করলা চাষ করেছিলাম। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে করলা ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম বদরুল আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে বরগুনা জেলায় ২শত ৬৩ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করে মন্ত্রণলায়ে পাঠিয়েছি। আশা করি তারা সহায়তা পাবেন।