বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া লোকের সংখ্যা বাড়ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ জুন, ২০২০
  • ২৬২ বার

‘নাকে গন্ধ নেই, জিহবায় স্বাদ নেই’- এমন মানুষের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের মধ্যে কারো কারো রয়েছে গলায় ব্যথা। আপনি যেখানে আছেন, যেখানে বাস করছেন অথবা আপনার কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুদের সাথে, প্রতিবেশীদের সাথে অথবা আপনার কলিগদের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে মিশলে এবং সুখ-দুঃখের কথা ভাগাভাগি করলেই এখন এ ধরনের শারীরিক অবস্থার কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। এটা কি করোনাভাইরাসে ( কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার লক্ষ্মণ?

এ প্রশ্নের জবাবে বিশিস্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, কোরোনার প্রধান লক্ষণ জ্বর, কফ ও কাশি। এখন এমন হলে ধরে নিতে হবে যে এটা করোনা। এর সাথে নাকে গন্ধ না থাকা, মুখে স্বাদ না থাকা। এটা সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত বলে ধরে নিতে হবে। এটাকে হালকা সন্দেহ হিসেবে দেখতে হবে। এদের ঘরে আইসোলেশনে থাকা উচিৎ। তবে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে যে হাসপাতালে অক্সিজেন আছে সেখানে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

এ ব্যাপারে পেশেন্ট সেফটি অ্যান্ড হেলথ কেয়ার উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঁ, করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তার এমন লক্ষণ থাকতে পারে। কোনো প্রকার লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াই অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। আগে যেমন জ্বর, কাশি, কফ এবং শেষ পর্যন্ত শ্বাসকষ্ট ছিল এখন অনেকের মধ্যে এসব লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না। তবে রোগের অবস্থা তীব্র হলে শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে।’

এ ধরনের লক্ষণযুক্ত মানুষের সংখ্যা অনেক। রাজধানী ঢাকাতেও যেমন রয়েছে তেমনি সারাদেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন মানুষ। তাহলে ঢাকাসহ সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কত? এ প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছেন না। কারণ দেশে এমন কোনো সমীক্ষা নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা শনিবার জানিয়েছেন, আজ পর্যন্ত দেশে ৬৩ হাজার ২৬ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে এবং ৮৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ দেশে উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিরাই স্বেচ্ছায় করোনা পরীক্ষা করতে আসেন। যাদের উপসর্গ নেই তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। উপসর্গহীনরা নীরবে অন্যের মধ্যে সংক্রমণ ঘটিয়ে যাচ্ছেন।

তবে মহাখালীর আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. জন ক্লেমেন্স ব্রিটেনের ইকোনমিস্ট সাময়িকীর সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কেবল রাজধানী ঢাকাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত ৭ লাখ হতে পারে। তবে ব্যাপারে আইসিডিডিআরবি’র জনসংযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা ড. জন ক্লেমেন্সের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে জন ক্লেমেন্স ইকোনমিস্টের সাংবাদিকের কাছে ঠিক সাড়ে ৭ লাখ আক্রান্তের কথা বলেননি। তিনি আইসিডিডিআরবি’র মোট জনশক্তির করোনা পজিটিভ রেজাল্টের সাথে ঢাকার মোট জনসংখ্যার তুলনা করে এ সংখ্যাটি বলেছেন যে, রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা এমন হতে পারে।

এ ব্যাপারে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বললেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা সংক্রমণের যে সংখ্যাটি দেখছি তা প্রকৃত সংখ্যা নয়। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পরীক্ষা করা হচ্ছে এর পরিমাণ আরো তিন গুণ বাড়িয়ে দিলে আক্রান্তের সংখ্যাও তিন গুণ বেড়ে যাবে। আবার তা যদি পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ গুণ হতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ কেবল আফগানিস্তানের একটু বেশি টেস্ট করতে পারছে। যা পরীক্ষা করা হচ্ছে এর বাইরে উপসর্গহীন অনেক রয়ে গেছে যারা নিজেদের অজান্তেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাহলে বলা যায়, এদের চক্রবৃদ্ধি হারে করোনা আক্রান্ত বাড়ছে। তিনি বলেন, শনাক্তকৃতদের সংস্পর্শে যারা এসেছে এদের সকলকে চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করতে না পারলে আক্রান্তের সংখ্যা শুধুই বাড়তে থাকবে। অতএব ড. জন ক্লেমেন্স যে সংখ্যাটি বলেছেন, রাজধানীর দুই কোটি মানুষের করোনা আক্রান্ত এমন হতেও পারে।

‘জিহবায় স্বাদ নেই, নাকে গন্ধ নেই’- এমন মানুষের সংখ্যা দেশের প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই রয়েছে। সাংবাদিক, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, গার্মেন্টস কর্মী, রিকসাওয়ালাসহ প্রায় সব শ্রেণীর মানুষই বলতে শুরু করেছেন যে তাদের স্বাস্থ্যের এ অবস্থা। গ্রামে এ সংখ্যাটি আরো বেশি। তারা এটাকে আমলে না দিয়ে অবাধে ক্ষেতে-খামারে কাজ করে যাচ্ছেন, মানুষের মিশছেন, বাজার করতে যাচ্ছেন. মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছেন।

নরসিংদী জেলা করোনা হটস্পট বলে পরিচিত। এ জেলার প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার মানুষ। অতএব এদের পরীক্ষার আওতায় এনে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া, এদের আইসোলেশনে নিয়ে এদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশে একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলেও তিনিই সারাদেশের মানুষকে আক্রান্ত করে দিতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com