সিলেটের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ করোনা রোগীরই অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। যারা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাদেরই প্রয়োজন পড়ছে অক্সিজেনের। দিতেও হচ্ছে ওই সাপোর্ট। একই সঙ্গে হার্টের সমস্যা, অ্যাজমা সহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর বেলায়ও অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু সিলেটে এরই মধ্যে সংকট শুরু হয়েছে অক্সিজেনের। সরকারি কিংবা বেসরকারি সব হাসপাতালেই চলছে এই সংকট। দিন দিন সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। এদিকে অক্সিজেন সাপোর্ট বাড়াতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দিয়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছেন তারা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে। কোভিড রোগী যারাই হাসপাতালে আসছেন তাদের কারো না কারো অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে। এ ছাড়া আইসিইউতেও সাপোর্ট দিতে হয়। ফলে অক্সিজেনের সংকট চাহিদা বাড়ছে। সোমবারও অক্সিজেনের সংকট কাটাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দিয়েছেন বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই বড় ১০০টি ও ছোটে আরো ১০০টি সিলিন্ডার সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিলো। ফলে অক্সিজেনের ঘাটতি ছিল না সিলেটের সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অক্সিজেনের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ। সিলেটের আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে করোনা রোগী এবং উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী বেশি। বলতে গেলে ঠাঁই হচ্ছে না এই হাসপাতালে। সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তার হাসপাতালে করোনা রোগীদের অন্যতম চিকিৎসা হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্ট। যারাই ভর্তি হচ্ছে তাদের অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। অক্সিজেন ছাড়া এখন আর তেমন চিকিৎসা নেই। তার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে। ছোট সিলিন্ডারও লাগছে ৫০-৬০টি। তিনি জানান, একজন রোগীকে বড় সিলিন্ডার দিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আর ছোট সিলিন্ডার দিয়ে সাপোর্ট দেয়া যায় ১ ঘণ্টা। এখনো অক্সিজেন ব্যবস্থা স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিলেটে বেসরকারি ভাবে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান শুরু হয়েছে। এই দুটি হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। তবে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অক্সিজেন তৈরি হয়। এ কারণে তাদের অক্সিজেন সংকট নেই। তবে আগের চেয়ে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ৩১ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের অধিকাংশেরই অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। রোববার থেকে সিলেটে কোভিড চিকিৎসা শুরু করেছে মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল। ওই হাসপাতালে রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন অক্সিজেন সংকটের কথা। তারা জানিয়েছেন, সিলেটে কয়েক মাস আগেও অক্সিজেনের যে চাহিদা ছিল সেটি বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে সরবরাহেও সংকট দেখিয়েছে। এ কারণে সিলেটে সংকট বেড়েছে বলে জানান তারা। সিলেটের অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ী সোহেল তালুকদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগেও যে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই সিলিন্ডারের দাম এখন ৭ হাজার টাকার উপরে। তবে তিনি বলেন, এখনো সিলেটে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ জানিয়েছেন, অক্সিজেনের দাম বাড়ানো অমানবিক। এখন করোনা রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট বেশি প্রয়োজন। সুতরাং মানবিক কারণেই দাম এখন সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত বলে তিনি জানান। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ‘সরকারিভাবে অক্সিজেনের সংকট নেই। কিন্তু বেসরকারি ভাবে যদি দামের কারণে সংকট তৈরি হয় সেটি অবশ্যই দেখতে হবে। প্রয়োজন হলে আমরা আরো কঠোর হবো।’ সিলেট ওসমানী মেডিকেল এলাকায় কয়েকটি রোগী বহনে নিয়োজিত এম্বুলেন্সের মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে করোনা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে গাড়িতেই এম্বুলেন্স অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। কিন্তু টাকা দিয়ে মিলছে না অক্সিজেন। ফলে সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।