বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গতকাল রবিবার পর্যন্ত পাঁচ হাজার জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫৬৭ জন নগরীর বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৬৯ জনের মধ্যে নগরে ২০৮ ও বিভিন্ন উপজেলায় ৬১ জন। গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। নগরে ৮৯ ও উপজেলায় ২৮ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, জনসমাগম, অফিস-আদালত ও কলকারখানা অবস্থানের কারণে গ্রামের তুলনায় শহরে আক্রান্তের হার বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে হার নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। করোনা সংক্রমণ শুরুর দিকে উপজেলাগুলোতে আক্রান্তের হার একেবারেই কম থাকলেও সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে। সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় না থাকায় জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের ৭০ শতাংশই মহানগরীতে। বাকি ৩০ শতাংশ বিভিন্ন উপজেলায়। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৭ জন। ১৪ উপজেলায় ১ হাজার ৫১৭ জন।
চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন হাটহাজারীতে। গতকাল পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭৭ জন। পটিয়ায় ২২০, সীতাকু-ে ১৮৮, বোয়ালখালীতে ১৬৭ এবং চন্দনাইশে ১২৫, লোহাগাড়ায় ৮২, রাউজানে ৮১, সাতকানিয়ায় ৮০, বাঁশখালীতে ৭৬, রাঙ্গুনিয়ায় ৭৫, আনোয়ারায় ৫৭, ফটিকছড়িতে ৪৩ জন, সন্দ্বীপে ২৫ এবং মীরসরাইয়ে ২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে না পারায় হাটহাজারীতে আক্রান্তের হার বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট। এজন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন তারা। হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, সচেতন করার পরও সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। দোকানপাট, মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা। সমন্বায়কনা থাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৩৬৩ জন। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২১৪ জন। শতাংশের হারে ২৭ ও ২৪।
আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৯০৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৪ ৭১১ জন। ৬০ বছরের বেশি বয়সী আক্রান্ত আছেন ৪৩৭ জন। শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী আক্রান্ত ১২১ জন এবং ১১ বছর থেকে ২০ বছরের মধ্যে আক্রান্ত ৩৩৪ জন।
গত শনিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। মৃত ১১৭ জনের মধ্যে ৮৯ জন মহানগরের এবং উপজেলায় ২৮ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ বছরের বেশি বয়সীদের। মৃতের সংখ্যা ৮২ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস-আদালত ও কলকারনাগুলো শহরে। ফলে এখানো মানুষের সমাগম বেশি। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে শহরে আক্রান্তের হার বেশি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধের প্রধান উপায় হলো ভিড় এড়ানো। তাই ভিড় বা জনসমাগম বন্ধ না হলে সংক্রমণ রোধ করা অসম্ভব।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি ছয়টি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা চলছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি (সিভাসু), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যাদলয় ও বেসরকারি ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল। এছাড়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবেও চট্টগ্রামের কিছু নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
গত ২৬ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।