‘স্বামী মাঝে মাধেই যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। আমার বাবা নাই। মা কষ্ট কইরে দুই দফায় টাকা দিছে। আবারও টাকা চায়। যৌতুক আইনা দিতে পারি নাই বইলা বছর খানেক আগে আমার দেড় মাসের একমাত্র সন্তানরে ২০ হাজার টাকায় বেইচ্চা দিছে স্বামী। তাতেও খান্ত হয় নাই। এইবার বাঁশের খুঁটির লগে বাইন্দা লাঠি দিয়া পিটাইলো স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। চেয়ারম্যান না বাঁচাইলে আমারে মনে অয় মাইরাই ফালাইতো…।’ কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই নির্যাতনের বর্ণনা দেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার খারজানা গ্রামের গৃহবধূ লাল ভানু। শরীরের ব্যথার যন্ত্রণায় এখন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
টাঙ্গাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, গৃহবধূকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ওই নারীর মা শুকরি বেগম থানায় মামলা করেছেন। আসামিরা গাঢাকা দিয়েছে। তবে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা এলাকার মৃত বিশা মিয়ার ছেলে আশরাফের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতেই সংসারে অভাবঅনটন দেখা দেয়। এর পর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেওয়ার কথা বলে প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান স্বামী আশরাফ।
এদিকে গত শুক্রবার (১২ জুন) গৃহবধূকে আবারও তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় পাষ- স্বামী ও তার বড় ভাইসহ পরিবারের ৭-৮জন মিলে তাকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।
সদর সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী আমাদের সময়কে বলেন, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবগত করি। এ ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় শুক্রবার আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। পেটানোর এক পর্যায়ে আমার বুকের মধ্যে একটা লাথি মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বেধরক মারধর করে।’