শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে করোনায় ৬৪ দিনে ৪০ চিকিৎসকের মৃত্যু

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০
  • ২৫৯ বার

বাংলাদেশে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৬৪ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪০ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ এপ্রিল প্রথম আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ডা: মঈন উদ্দিন আহমেদ। আর চলতি জুন মাসের ১৭ দিনের মধ্যেই ২৫ চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৬ জুন পর্যন্ত সারা দেশে চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৬৭ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, বাংলাদেশে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু ও আক্রান্তের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশে মেডিক্যাল অ্যাসোসিশনের (বিএমএ) তথ্য অনুসারে ১৬ জুন সারা দেশে চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩১ জন। নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮৪ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩৫২ জন। বিএমএর তথ্য অনুসারে চিকিৎসকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০৪ জন, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০৩ জন, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫৬ জন, ঢাকার বেসরকারি আসগর আলী হাসপাতালে ২১ জন, হৃদরোগ হাসপাতালে ১১ জন, শেরেবাংলা নগরের নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ১১ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ জন, কিডনি হাসপাতালে ৯ জন, শিশু হাসপাতালে ৬ জন, মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালে ১০ জন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ১৩ জন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১১ জন, এভারকেয়ার (সাবেক এ্যাপোলো) হাসপাতালে ৫ জন, বারডেমে ৭ জন, ইউনিভার্সাল হাসপাতালে ৩ জন, পঙ্গু হাসপাতালে ৯ জন। টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন মূলত মানহীন সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে করোনায় ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এটা ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, এ কারণে আজ জাতিকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। অদক্ষতা, অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণেই এসব হয়েছে। চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আব্দুর নূর তুষার বলেছেন, ভারত অনেক বড় দেশ। কিন্তু সে দেশে ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিক আক্রান্তের সংখ্যা ৬০০-এর কম।

দেশে প্রথম চিকিৎসক করোনায় মৃত্যুবরণ করেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা: মো: মঈন উদ্দীন আহমেদ। তিনি মারা যান ১৫ এপ্রিল। এপ্রিল মাসে চিকিৎসক মারা গেছেন একজন। তবে মে মাসে মারা গেছেন ১২ জন। করোনায় মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসকদের মধ্যে বেশির ভাগই সিনিয়র চিকিৎসক। তারা কেউ ছিলেন অধ্যাপক, কেউবা কনসালট্যান্ট। এদের অনেকেই কর্মরত অবস্থায় করোনার চিকিৎসা দিতে গিয়ে মারা যান।

৩ মে মারা গেছেন হেমাটোলজিস্ট ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন স্পেশালিস্ট, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক কর্নেল (অব:) ডা: মো: মনিরুজ্জামান। তিনি মারা যান ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ১১ মে মারা গেছেন নর্দান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: আনিসুর রহমান। তিনি মারা গেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ১২ মে মারা গেছেন বিশিষ্ট রেডিওলজিস্ট ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টারের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব:) ডা: আবুল মোকারিম মো: মোহসিন উদ্দিন। তিনি মারা যান ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ১৮ মে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ম-১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা: মো: আজিজুর রহমান রাজ। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা: এম এ মতিন মারা গেছেন ২২ মে। তিনি মারা গেছেন সিলেটের শামসুদ্দিন হাসপাতালে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা: কাজী দিলরুবা মারা গেছেন ২২ মে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার

ডা: এসএম জাফর হোসাইন। তিনি মারা গেছেন ২৫ মে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৬ মে মারা যান গাইনি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: আমিনা খান।

এনেস্থেশিয়ার ও আইসিইউ বিশেষজ্ঞ ডা: আব্দুর রহমান মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৬ মে। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৭ মে মারা গেছেন বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা: মো: মোকারোফ হোসেন। আর্মি মেডিক্যাল কোরের ক্যাপ্টেন (অব:) ডা: এ এফ এম সাইদুল ইসলাম ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ মে। বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা: ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ বাবলু মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৩১ মে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ জুন মারা গেছেন ডা: মনজুর রশিদ চৌধুরী। তিনি ইউরোলজির বিশেষজ্ঞ ছিলেন। চট্টগ্রামের মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (মেডিসিন) ডা: এ এস এম এহসানুল করিম মারা যান ৩ জুন।

বারডেমের ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা: মো: মহিউদ্দিন মারা গেছেন ৩ জুন। তিনি মারা যান ঢাকার হলিফ্যামিলি হাসপাতালে।
অধিদফতরের অবসরপ্রাপ্ত ইভালুয়েটর অফিসার ডা: কে এম ওয়াহিদুল হক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জুন মারা গেছেন। বিশিষ্ট ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: হাবিবুর রহমান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ৪ জুন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএমও ডা: মুহিদুল হাসান মারা গেছেন ৪ জুন। বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি মারা যান ৪ জুন। বিশিষ্ট ই্উরোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা: এস এ এম গোলাম কিবরিয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৪ জুন।

ডা: এহসানুল কবির চৌধুরী অবসরপ্রাপ্ত ইউএইচ অ্যান্ড এফপিও। মারা গেছেন ৪ জুন। ডা: আবুল কাশেম খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার সাভার ইপিজেড। তিনি মারা গেছেন ৬ জুন। স্কয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও পরিচালক (মেডিক্যাল সার্ভিস) ডা: মির্জা নাজিম উদ্দিন মারা গেছেন ৭ জুন। বেসরকারি হাসপাতালের ডা: রাজিয়া সুলতানা মারা গেছেন ৮ জুন। অ্যানেসথেশিয়ার কনসালট্যান্ট ডা: সাখাওয়াত হোসেন (ল্যাব এইড হাসপাতাল) মারা গেছেন ৮ জুন। রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: আনোয়ার হোসেন মারা গেছেন ৯ জুন। ইমপালস হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ও সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা: জলিলুর রহমান মারা গেছেন ৯ জুন। মেরিস্টোপসের হেড অব কোয়ালিটি, মেটারনিটি বিভাগের ডা: তানজিলা রহমান মারা গেছেন ১০ জুন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা: গাজী জহিরুল হাসান মারা যান ১২ জুন। আবার ১২ জুনই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মাহমুদ মনোয়ার মারা গেছেন। জেড এইচ সিকদার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: এ কে এম ফজলুল হকও ১২ জুন মারা যান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা: আরিফ হাসান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ১২ জুন। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বিসিআইসির অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা: তৌফিকুন নেছার মৃত্যু হয়েছে ১৫ জুন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: এ কে এম মুজিবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জুন। তিনি সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের সাবেক ছাত্র।

গতকাল বুধবার (১৭ জুন) করোনা আক্রান্ত হয়েছে মৃত্যু বরণ করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডা: মো: আশরাফুজ্জামান, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, বিএমএ দিনাজপুর শাখার সাবেক সভাপতি ডা: মো: শাহ আব্দুল আহাদ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে কর্মরত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ডা: মো: নুরুল হক।

(চিকিৎসকদের ছবি বিএমএ থেকে পাওয়া)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com