আগামী ২৩ জুন মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারী নির্বাচন। ইতিমধ্যেই এই নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলছে আগাম ভোট প্রদান। গত ১৩ জুন শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই ভোট গ্রহণ চলবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত। বিশেষ করে করোনাকালীন প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এবারের প্রাইমারী নির্বাচনে নতুন প্রজন্মের সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রিতিদ্বন্দিতা করছেন। নির্বাচনে ইউএস কংগ্রেসে ২জন, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীতে ৩জন বাংলাদেশী-আমেরিকান এবং ডিষ্ট্রিক্ট লীডার সহ বিভিন্ন পদে একাধিক বাংলাদেশী বংশদ্ভুত অংশ নিচ্ছেন। ফলে আমেরিকার রাজনীতিতে নতুন স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি। বিশেষ করে পেলসেলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অডিটর জেনারেল নির্বাচনের প্রাইমারী বাংলাদেশী-আমেরিকান ড. নীনা আহমেদ-এর জয়ের পর নিউইয়র্কের প্রাইমারীতেও জয়ের স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশী আমেরিকানরা। এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের চেয়ে যাতে অ্যাবসেন্টি ব্যালটে ভোট দেয়া যায় সেজন্য নিউইয়র্ক বোর্ড অব ইলেকশন ঘরে ঘরে অ্যাবসেন্টি ব্যালট প্রেরণ করছে। তবে এজন্য সংশ্লিস্ট ভোটারকে আবেদন করতে হবে। ফোনে বা ইমেইলে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। খবর ইউএনএ’র।
আগামী ২৩ জুনের (মঙ্গলবার) প্রাইমারী নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশদ্ভুত প্রার্থীদের মধ্যে ইউএস কংগ্রেসওম্যান পদে নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-১৪ থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা লড়ছেন বদরুন্নাহার মিতা এবং কংগ্রেশনাল ডিষ্ট্রিক্ট-৫ থেকে প্রতিদ্বদ্বতা লড়ছেন সানিয়াত চৌধুরী। নিউইয়র্ক ষ্টেটের অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৭ (কুইন্স ব্রীজ, লং আইল্যান্ড সিটি, সানি সাইড, উডসাইড, ম্যাসপাথ ও রিজউড) থেকে অ্যাসেম্বলীওম্যান পদে লড়ছেন মেরী জোবায়দা, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে লড়ছেন মাহফুজুল ইসলাম, এবং অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৪ থেকে লড়ছেন জয় চৌধুরী। এছাড়াও ডেমোক্র্যাট দলীয় ডিষ্ট্রিক্ট লীডার পদে অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে লড়ছেন মৌমিতা আহমেদ, মাহতাব খান ও ইশতিয়াক চৌধুরী, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩২ থেকে লড়ছেন মোহাম্মদ চৌধুরী ও মোবাসসেরা বেগম, অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে লড়ছেন সাঈদা আক্তার। অপরদিকে অ্যাসেম্বলী ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে জুডিলিয়াল ডেলিগেট পদে লড়ছেন মোহাম্মদ এম রহমান।
বদরুন খান (বদরুন্নার খান মিতা) বর্তমানে ইউএস কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী ও আলোচিত কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ-এর বিরুদ্ধে লড়ছেন। বিগত নির্বাচনে ওকাসিও প্রবীণ রাজনীতিক কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়ে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত হন। অপরদিকে মেরী জোবাইদার প্রতিদ্বদ্বি প্রার্থী হচ্ছেন প্রবীণ অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাথেরিন নোলান। তিনি এবারের নির্বাচনে আলোচিত ও সম্ভাবনাময় প্রার্থী বলে কমিউনিটির অনেকেই মনে করছেন। উল্লেখ্য, বিগত ৩৫ বছর ধরে নিউইয়র্ক-এর অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন ক্যাথরিন নোলান। এমনকি গত এক দশকে কেউ প্রাইমারী নির্বাচনে তাকে চ্যালেঞ্জটুকুও জানায়নি। দীর্ঘ বছরের পর এবারই প্রথম ক্যাথরিন নোলান প্রাইমারীতে মেরী জোবাইদার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন। ২০১০ সালের আদমশুমারীর হিসেবে । অ্যাসেম্বলী ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ আসনে ১,২৯,১৮৭ মানুষের বসবাস।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মিডিয়ার সাথে আলাপকালে মেরী জোবায়দা বলেছেন, ২০০০ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই ২০০১ সালে ১৬ নভেম্বর মেরী জোবাইদা বাংলাদেশের একটি গ্রাম থেকে কুইন্সে চলে আসনে। সেই সময় তিনি বোরকা পড়তেন, তবে তখন তার কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিনো প্রতিবেশীদের জন্য সামান্য ইসলামফোবিয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি বলেন, নিউইয়র্কের সম্প্রদায়গুলো আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছিল এবং আমাকে যেভাবে গ্রহণ করেছিল, ৯/১১-এর পরে তারা আমাকে মুসলিম হিসেবে অপমান করেনি। তারা আমার প্রতি খুব প্রতিরক্ষামূলক ছিল। তিনি বলেছেন, আমেরিকায় এসে তার প্রথম প্রথম যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাই মূলত দেশটিতে তার রাজনীতিকে গড়ে দিয়েছে। তাকে বিরোধিতা করার জন্য প্ররোচিত করেছে। সেই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যুর প্রতিবাদে একজন সোচ্চার সমর্থক হতে প্ররোচিত করেছে।
মেরী জোবাইদা ইউএনএ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে কমিউনিটির সেবা বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটির হাউজিং, স্থাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন। এজন্য তিনি সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং প্রাইমারী নির্বাচনে তিনি ৩/৪ হাজার ভোট পেলেই বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।