শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

ফাঁড়া কাটছে না চামড়াশিল্পে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০
  • ২৩৭ বার

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের পরেই দ্বিতীয় রপ্তানিকারক খাত হিসেবে চামড়াশিল্প শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল। একটার পর একটা বিপদ এসে পড়ে চামড়াশিল্পের ওপর। ২০১৭ সালে চামড়াশিল্প হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে শিল্পনগরীতে স্থানান্তর কেন্দ্র করে ক্রেতা হারাতে থাকে উদ্যোক্তারা।

বছরের পর বছর লোকসানের ঘানি টানছে তারা। এর পর নতুন করে শুরু হলো করোনা ভাইরাসের আক্রমণ। করোনা রপ্তানি আয়ের এ খাতকে পুরো বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশের চামড়াপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার চীন। এর পর রয়েছে ফ্রান্স, জার্মান ও ইতালি। এসব দেশে করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এ শিল্প বাঁচাতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা। সাভারের চামড়া শিল্পপল্লী ঠিক না করে হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরের নামে যে হয়রানি করা হয়েছে, তার ক্ষতি কোনোদিন পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বিসিকের সেই ভুলের খেসারত এখন বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে। রপ্তানি ঠেকেছে তলানিতে। দীর্ঘসময়ের পালাবদলের ফলে অনেক ক্রেতাই ছুটে গেছেন। আবার অনেক ক্রেতা বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকারখানা কমপ্লায়েন্স না থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে চামড়া নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

সর্বশেষ বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রক্রিয়াজাত চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলারের। এই ১১ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য।

এদিকে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় (জুলাই-মে) রপ্তানি হয়েছিল ৯৪ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। হিসাবের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কমেছে ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের (জুলাই-মে) তুলনায় রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

ইপিবি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চামড়াজাত পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় হয় পাদুকা থেকে। গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এখান থেকে রপ্তানি হয় ৬০ কোটি ৭৮ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য।

এদিকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৮ কোটি মার্কিন ডলারের। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মে) এই ১১ মাসের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় রপ্তানি হয়েছিল ৫৫ কোটি ৭৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি কমেছে ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। একই সঙ্গে গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

এদিকে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে চামড়াশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাভের কথা বিবেচনা করে কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এতে ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অর্জন করবেন।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার আসন্ন ঈদুল আযহায় চামড়া সংরক্ষণে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসাগুলো বহুদিন ধরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত। এ থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দিলে তারা আসন্ন কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী হাজারীবাগে অবস্থিত ট্যানারি মালিকদের জমিতে ‘রেড জোন’ ঘোষণা দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য রাজউকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ট্যানারি মালিকরা যাতে ঋণ পেতে পারেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, চামড়াশিল্পে করোনা ভাইরাস শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। তার খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিসমূহে বর্তমানে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার চামড়া জমা আছে। ট্যানারি মালিকদের জন্য আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ঋণসহায়তা নিশ্চিত করা ছাড়া অধিকাংশ ট্যানারি মালিকের পক্ষে চামড়া ক্রয় সম্ভব হবে না।

ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন আমাদের সময়কে বলেন, এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সবার আগে সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলা হলেও চামড়া শিল্পোদ্যোক্তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে চামড়াশিল্প স্থানান্তরকে নিয়ে শিল্প মালিকরা কঠিন বিপদের মুখে পড়েন। তারা ব্যাংক ঋণ শোধ করতে পারেননি। ফলে এখন তারা ঋণখেলাপি। সবার আগে তাদের ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্তি দিতে হবে। তারপর তাদের ব্যাংক ঋণ দিতে হবে যেন কোরবানির আগের চামড়া কিনতে পারে। তা না হলে গত বছরের চেয়ে এ বছর ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com