মহামারী করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হচ্ছে। বড় ধররের পরিবর্তন ছাড়াই আজ সোমবার পাস হচ্ছে অর্থবিল। খবর অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের।
জানা গেছে, মানবজীবনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ১১ জুন বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর পর প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে এমপি ও মন্ত্রীরা আলোচনা করেন। সেখানেই উঠে এসেছে করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি।
আগামী অর্থবছরে করোনা মোকাবিলায় কৌশল ঠিক করেছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে-সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন, যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত হয় এবং দেশে-বিদেশে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়া হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া জনগণকে সুরক্ষা ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কর ও ভ্যাট কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন করা হচ্ছে না। বরং করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ানো ও তা খরচের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য এ খাতে বরাদ্দ কিছু বাড়তে পারে। আগামীকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে নতুন অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার জনবল নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ডাক্তার, ৬ হাজার নার্স, ৩ হাজার মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট এবং ৭৩২ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া করোনা ঝুঁকি মোকাবিলায় দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরও দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ভাইরাসজনিত রোগ নির্ণয় ও এ সংক্রান্ত গবেষণার লক্ষ্যে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ করোনা সংকট দূরীকরণে নতুন জনবল নিয়োগ, গবেষণা ও প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে আগামী অর্থবছরে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি বাজেটে স্বাস্থ্য খাত সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য মোট ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বাজেটের বড় একটি অংশই অবশ্য খরচ হবে পরিচালন ব্যয়ে, যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। বাকিটা মূলত ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে। স্বাস্থ্য খাতকে এবার সর্বাপেক্ষা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রণোদনা ও ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কী পরিবর্তন আসছে অর্থবিলে
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও করোনা মোকাবিলায় এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঘোষিত করের ওপর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার ক্ষেত্রে কিছুটা ভ্যাট ও ট্যাক্সেও প্রস্তাব করেছিলেন। সেটিও আগের অবস্থানে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ মোবাইল ফোনে কথা বলা, খুদেবার্তা পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেটি আগের মতো ১০ শতাংশই থাকছে। অন্যদিকে বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর ৫ দিনের মধ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিল বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটিও প্রত্যাহার হতে পারে। এ ছাড়া কোম্পানির প্রচারব্যয় টার্নওভারের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হলে তা আয়ের দেখানোর প্রস্তাবনা করা হয়েছিল, তা-ও প্রত্যাহার হতে পারে। এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে সবেচেয়ে বেশি ভরসা করা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মূসকয়ে।