রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত ওয়ারী এলাকার ভেতরে-বাইরের আটটি রোডে লকডাউন শুরু হচ্ছে আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে। এটি শেষ হবে ২৫ জুলাই। ইতোমধ্যে লকডাউন বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বিভিন্ন স্থানে প্রচারপত্র বিলিসহ চলছে মাইকিং। লকডাউন এলাকার দুটি প্রবেশপথ বাদে বাকি সব পথে তৈরি করা হয়েছে শক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী। খাদ্যসহ অন্য জরুরি সেবা নিশ্চিতেও চলছে নানা আয়োজন। এর আগে উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন বাস্তবায়ন করা হয়। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বেশকিছু নতুন উদ্যোগও রয়েছে ওয়ারীতে।
ডিএসসিসির আওতাধীন ওয়ারীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে বাইরের রোডগুলো হলো টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন)। গলিগুলোর মধ্যে রয়েছে লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।
ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ওয়ারী এলাকা লকডাউনের বিষয়ে বলেন, এসব এলাকা ২১ দিন লকডাউন থাকবে। কেবল দুটি সড়ক হয়ে যাতায়াত থাকবে। বাকি সড়কগুলোর মুখ আমরা বন্ধ করে দেব। সেখানে একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বুথ স্থাপন করা হবে। এদিকে
লকডাউন বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলোও এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে।
স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকাটির আয়তন বিবেচনায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। ফলে বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তারা বলেন, পুরান ঢাকার মধ্যে ওয়ারী এলাকাকে অভিজাত এলাকা হিসেবে ধরা হয়। এখানে প্রচুর ব্যবসায়ীর বসবাস। এ ছাড়া এমন ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকার রাস্তাঘাট জনশূন্য রাখাও কঠিন হতে পারে। তবে এর চেয়েও চ্যালেঞ্জিং হবে এলাকার ব্যবসায়ীদের আটকে রাখা। কারণ তাদের কাছে ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি সামনে ঈদুল আযহা থাকায় সেই গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
তবে সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউন বাস্তবায়নে সব রূপরেখা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়েই লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউন শুরু হলে রেড জোনে অতিজরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না। এসব এলাকার ভেতরে সব ধরনের চলাচল বন্ধ, প্রবেশ বা বের হওয়ার সুযোগ থাকবে নিয়ন্ত্রিত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ মো. ইফতেখায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু শঙ্কাও আছে। কারণ পূর্ব রাজাবাজারের তুলনায় এখানে জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। এলাকাবাসীকে বুঝিয়েছি এই এলাকায় করোনা ভাইরাস প্রতিহতে লকডাউনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ওয়ারীর লকডাউনে কারও আইসোলেশনে থাকার প্রয়োজন হলে ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও থাকবে। এলাকার ওষুধের দোকানও খোলা থাকবে। তিনি বলেন, আমরা যাদের প্রয়োজন তাদের বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দিব। এর বাইরে যারা রয়েছেন তারা অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। লকডাউন এলাকার মধ্যে তিনটি সুপার শপ রয়েছে। তারাও অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।