করোনার আতঙ্ক এবং বন্যার দুর্ভোগের মধ্যে অনুষ্ঠিত বগুড়া ও যশোর উপনির্বাচনে যথাক্রমে ৪৬ ও ৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। দুই রিটার্নিং অফিসারের দেয়া লিখিত ফলাফল অনুযায়ী যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনের উপনির্বাচনে স্বাভাবিক সময়ের মতোই ভোট পড়েছে। অস্বাভাবিক এ পরিস্থিতিতে এত সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি আজগুবি ও অবিশ্বাস্য নির্বাচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বগুড়ায় যেখানে মানুষ বন্যায় ভাসছে, সেখানে কোথা থেকে ইসি এত ভোটার পেল। এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচনের প্রতি সাধারণ ভোটার ও মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। মানুষ ইসির কথা বিশ্বাস করে না।
রিটার্নিং অফিসারের তথ্যানুযায়ী, যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে ভোট পড়েছে ৬৩ শতাংশ। অন্য দিকে বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে পড়েছে ৪৬ শতাংশ। উভয় আসনে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের আসন দু’টিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
যশোর-৬ (কেশবপুর) : রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবীরের তথ্যানুযায়ী, এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ১৮ জন। আর নির্বাচনে ৭৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোট প্রদান করেছেন এক লাখ ২৯ হাজার ৬৭ জন। যার মধ্যে বৈধ ভোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৩টি। বাতিল এক হাজার ৩৭৪টি। এতে এক লাখ ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন আজাদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ১২ ভোট। অন্য দিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৬৭৮ ভোট। ভোটের হার ৬৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) : এই উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার মো: মাহবুব আলম শাহর দেয়া তথ্যানুযায়ী, আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ জন। ১২৩টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮২ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন। এর মধ্যে বৈধ ভোট ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৭টি এবং ১ হাজার ৩১৫টি ভোট বাতিল হয়েছে। ভোট পড়ার হার ৪৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাদারা মান্নান ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ ট্রাক প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৫৯৯ ভোট, জাতীয় পার্টির মোকছেদুল আলম লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ২৫১ ভোট, বিএনপির এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৬৪ ভোট।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব: সাখাওয়াত হোসেনের মতে, এসব তথ্য অবিশ্বাস্য ব্যাপার। বগুড়ায় করোনা ছাড়াও মানুষ বন্যার ভেতরে পড়ে আছে। সেখানে ভোটারের এ উপস্থিতি নির্বাচন কমিশন নিজেই বিশ্বাস করে কি না? তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দায়দায়িত্ব বতর্মান ইসির। বাংলাদেশের মানুষ সেই ১৯৫০ সালে নেই। মানুষ এখন অনেক সচেতন। ইসি যা বলবে তারা তা বিশ্বাস করবে? তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে অব্যবস্থা সৃষ্টি করা, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করার দায় বর্তমান ইসির। আমি তো ভাবছিলাম যে এটার দায় আগের ইসির। আগের ইসি তো নষ্ট করেছে; যা বাকি ছিল সেটা বর্তমান ইসি পূর্ণ করে দিলো।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই নির্বাচন কমিশন মহাপ্রতারণা করেছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে। ফলে ওই নির্বাচনের পর তাদের ওপর আস্থা রাখার কোনো কারণ নেই। কাদের স্বার্থে তারা এই কাজ কেন করেছে তাও বোধগম্য নয়। আগে যখন কাগজের ব্যালটে ভোট হতো তখন সেটি দেখা যেত। এখন তো ডিজিটাল কারচুপি, যা অতিসহজেই করা সম্ভব। তাই এই নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো আস্থা নেই। আর তারা যা বলছে তাদের সেই কথায়ও কোনো বিশ্বাস করা যায় না।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেমা’র চেয়ারপারসন মুনিরা খানের মতে, এই কমিশনের অধীনে এ ধরনের নির্বাচনই আমরা আশা করেছিলাম। করোনা ও বন্যার সব পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ এ সময়ে নির্বাচনকে খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখবে না। উপনির্বাচন যেমনটি হয়, তেমনই হয়েছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে দেশের জনগণ খুব একটা চিন্তা করেছে বলে আমার মনে হয় না। ঠিক তেমনি আমিও এই নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাভাবনা করিনি।