চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা খালি। চট্টগ্রামে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩০৯ জন। বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ হাজার ৮৬২ জন। এক মাস আগেও করোনার বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হতে না পেরে হাসপাতালের প্রবেশপথে রোগী মারা গেছেন। এখন সব হাসপাতাল ফাঁকা পড়ে আছে।
হাসপাতালে রোগী কমে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা, দুশ্চিন্তা দূর হওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমছে। বাসায় চিকিৎসা নিয়ে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাদের দেখে নতুন রোগীরাও বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলা মিলিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে এক হাজারের বেশি করোনা রোগী ভর্তি করানো সম্ভব। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৫০ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১১০ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ৩০ জন ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ জন একসঙ্গে ভর্তি হতে পারবেন।
এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন সেন্টার, ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম, ৫০ শয্যার সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল, আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। অথচ এসব হাসপাতালের অর্ধেক এখন খালি পড়ে আছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় রেড ও হলুদ জোনে বিভক্ত করে করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নানা কারণে হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমে এসেছে।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, হাসপাতালেও রোগীর চাপ কমে এসেছে। হাসপাতালটির ৩০ শয্যার মধ্যে ১৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রথমদিকে ২৭ থেকে ২৯ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি ছিল।
চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালেও রোগী কমে অর্ধেকের নিচে এসেছে। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৫ জন। এখন পর্যন্ত ২১০ জন রোগী ভর্তি হয়ে ১৯৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ইনডোর-আউটডোর মিলে ফিল্ড হাসপাতাল সাড়ে ১ হাজার ৪০০ আক্রান্তকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
রোগী কমে যাওয়ার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের সিইও ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া আমাদের সময়কে বলেন, আগে মানুষ ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে ছিল। অল্পতে হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়েছে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভীতি, শঙ্কা দূর হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে আসছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে ১২ হাজার ৬৬৯ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; এর মধ্যে ৮ হাজার ৮২৩ জন নগরের ও ৩ হাজার ৮৪৬ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মোট ২২১ জন। এর মধ্যে ১৫৭ জন নগরের ও ৬৪ জন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ১ হাজার ৪৯৮ জন করোনা রোগী। সে হিসাবে ১১ হাজার ১৭১ জন রোগী হাসপাতাল কিংবা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে ৩০৯ জন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রথমত এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কম। অনেকে আগে ভীতির মুখে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইতেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ আর সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগছে না।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের সংখ্যা শতের নিচে নামল। চট্টগ্রামের ৫টি ল্যাবের ৩৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে নগরীর ৬৯ জন ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১৬ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৭৫৪ জনে। সুস্থ হয়েছেন ২৭ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন।