মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

খুনের পর ফাহিমের কার্ড দিয়ে বেলুন কিনেছিলেন ঘাতক!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২০ জুলাই, ২০২০
  • ২২৬ বার

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহকে খুনের পর তার কার্ড দিয়েই শপিং করে খুনি টেরেস ডেভোন হাসপিল। নৃশংস এ খুনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ যখন মরিয়া, তখন গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জন্মদিনের পার্টি উদযাপনের। এ জন্য খুনের দুই দিনের মাথায় বান্ধবীর ২২তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য ২২ লেখা দুটি বেলুন কেনেন হাসপিল।

গত শনিবার প্রকাশিত ভিডিওতে হাসপিলকে ওই বেলুন কিনতে দেখা গেছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট।

পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাহিম সালেহকে হত্যার পর খুনি হাসপিলকে ওই তরুণীর সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা যায়। অন্যান্য কেনাকাটার পাশাপাশি বান্ধবীর জন্মদিনের বেলুনও কিনে ২১ বছরের নৃশংস এই খুনি।

শনিবার প্রকাশিত ভিডিওতে ঘাতক টেরেস হাসপিলকে শপিংয়ে যাওয়ার জন্য ক্যাব খুঁজতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সামান্য এগিয়ে ফাহিমের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি গাড়ি থেকে ২২ লেখা দুটি বেলুন কেনেন তিনি। নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক পোস্টের কাছে এই খুনিকে ‘আমেরিকার নতুন সাইকো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

১৭ জুলাই মধ্যরাতে ম্যানহাটনের ক্রিমিনাল কোর্টে হাসপিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময় প্রসিকিউটররা জানান, ইতোমধ্যেই খুনিকে দোষী প্রমাণের জন্য ‘পর্যাপ্ত আলামত’ পাওয়া গেছে। নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ দেখে এসব আলামত শনাক্ত করা হয়েছে।

ম্যানহাটনের অ্যাসিসট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি লিন্ডা ফোর্ড বলেন, ভিডিওতে হাসপিলকে একটি হোম ডিপো থেকে করাত ও পরিষ্কার করার উপকরণ কিনতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে সে উপকরণগুলোই সংগ্রহ করা হয়েছে। নজরদারি ক্যামেরা ফুটেজে হত্যাকারীর গায়ে যেমন পোশাক ছিল সে রকম পোশাক হাসপিলের ব্রুকলিনের বাড়িতে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতেও ঘটনাস্থলেও তার উপস্থিতি শনাক্ত করতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

লিন্ডা ফোর্ড বলেন, ‘এ মামলার ক্ষেত্রে বিস্তর প্রমাণ রয়েছে। অপরাধ সংঘটনের আগে ও পরে তাকে নজরদারি ক্যামেরায় দেখা গেছে। ভিডিও টেপ দেখে অন্তত দুজন ব্যক্তি তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে।’

ফোর্ড আরও অভিযোগ করেন, ১৩ জুলাই দুপুর প্রায় পৌনে দুটার দিকে লিফট-এ করে ফাহিমের পিছু নেয় মাস্ক পরিহিত হাসপিল। লিফটটি ফাহিমের ফ্ল্যাটে পৌঁছানোর পরপরই তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় এবং তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর মরদেহ অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে রেখে সেখান থেকে চলে যায় হাসপিল।পরদিন হোম ডিপো থেকে করাত ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে আবারও ওই অ্যাপার্টমেন্টে যান তিনি।

সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাহিমের মরদেহ টুকরো করা শেষে সেগুলো ব্যাগে ভরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল হাসপিলের। তবে তার আগেই ফাহিমের খালাতো বোন এসে কলিংবেল চাপতে থাকলে ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যান হাসপিল।

নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনা সম্পর্কে অবগত তিনজন কর্মকর্তা তাদের জানিয়েছেন, ফাহিমের কাছ থেকে আগে ৯০ হাজার ডলার চুরি করেছিল হাসপিল। ফাহিম তখন তাকে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। বরং হাসপিল যেন কিস্তিতে টাকাটা ফেরত দিতে পারে, তার পথ বাতলে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গোয়েন্দারা ফাহিমের ফোনে পাওয়া একটা টেক্সট মেসেজে এই টাকা চুরির ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর হাসপিলের ওপর নজরদারি শুরু করে। এরপরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে রোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের ইতিবৃত্ত।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৪ জুলাই নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার নিজ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিম সালেহ’র ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৭ জুলাই এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাসপিলকে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com