শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

করোনায় তিন মাসে ঢাকা ছেড়েছে দেড় লাখ পরিবার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০
  • ১৯৩ বার

করোনার আগে ভাড়া ছিল ১৪ হাজার টাকা। এখন সেই বাসাটিই ১০ হাজার টাকায়ও ভাড়া হচ্ছে না। ব্যাংক লোন নিয়ে করা বাড়ির ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে গত তিন মাসে পর্যায়ক্রমে ফাঁকা হয়ে গেছে সাতটি ফ্ল্যাট। গ্যাস বিল, পানি বিল ও সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে যে পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে, তা ৫টি ফ্ল্যাটের আয় থেকে কোনো মতেই মেটাতে পারছেন না রামপুরার গিয়াস উদ্দিন। করোনার প্রভাবের শুরুর দিকেই দু’টি ফ্ল্যাট খালি হয়ে যায়।

গিয়াস উদ্দিন ধারণা করেছিলেন করোনার থাবা থেমে গেলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার এই সঙ্কট আরো প্রকট হয়েছে। এখন ভাড়া কমিয়েও আটকাতে পারছেন না ভাড়াটিয়া। এ অবস্থা এখন ঢাকার অনেক বাড়ির মালিকদের।

এ দিকে ভাড়াটিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে গত তিন মাসে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড় লাখের বেশি পরিবার গ্রামে চলে গেছে। চাকরি হারিয়ে কিংবা অন্য কোনো পেশার লোকজনের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই অনেকে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে আবার ঢাকা ছেড়েছেন সন্তানদের স্কুল বন্ধের কারণে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ঢাকায় ফিরবেন তারা। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ঘুরলে মোড়ে মোড়ে কিংবা বাসাবাড়ির সামনে গেটে ঝুলানো ‘টু লেটের’ ছড়াছড়ি দেখলেই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হচ্ছে। আগে যেখানে তিন মাসের ভাড়া কিংবা আরো বেশি টাকা অগ্রিম দিয়ে বাসা ভাড়া নিতে হতো এখন সেখানে অগ্রিম টাকা ছাড়াই বাসা ভাড়া দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর পরও কোনো বাসা খালি হলে সেটি শিগগিরই ভাড়া হচ্ছে না।

মগবাজারের একটি বাড়ির মালিক লিয়াকত জানান, তিন মাস ধরে আমার তিন রুমের বাসাটি ভাড়া হচ্ছে না। ২০১০ সালে বাড়িটি তৈরি করার পর এখন পর্যন্ত এক মাসের জন্যও বাসাটি ফাঁকা যায়নি। কিন্তু করোনার কারণে বাসাটি আমার ফাঁকা পড়ে রয়েছে। একইভাবে গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারা, সেগুনবাগিচা, ধানমন্ডিসহ অন্যান্য অভিজাত এলাকাতেও অনেক ফ্ল্যাট বাসা ফাঁকা রয়েছে। ব্যবসায় মন্দা কিংবা অফিস বন্ধ থাকায় অনেকে চলে গেছেন গ্রামের বাড়ি। এসব এলাকাতেও ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটিয়া টানার চেষ্টা করছেন বাড়ির মালিকরা।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার জানান, আয়-রোজগার কমে যাওয়া কিংবা চাকরিচ্যুতির কারণেই মূলত অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন। তিনি আরো জানান, ২০০১ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায় মোট বাসিন্দাদের মধ্যে শতকরা ৮০টি পরিবারই ভাড়াটিয়া। বাকি ২০ ভাগ হচ্ছেন বাড়ির মালিক। তবে বর্তমানে ঢাকায় ভাড়াটিয়া এবং বাড়ির মালিক দু’টিই আনুপাতিক হারে বেড়েছে।

বাড়ির মালিকরা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর দিকে অর্থাৎ মার্চ ও এপ্রিল মাসে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি ভাড়া কমানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন বাড়ির মালিকরা দাবি জানিয়েছিলেন যাতে করোনার সময়ে গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ও অন্যান্য ট্যাক্স মওকুফ করা হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ বা আশ্বাস পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে চাকরি হারিয়ে কিংবা আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় ঢাকা ছাড়তে শুরু করে অনেক পরিবার। সম্প্রতি এ সমস্যাটি আরো প্রকট হয়েছে। ঢাকার প্রায় বাড়ির গেটেই এখন বাড়ি ভাড়ার নোটিশ ঝুলছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিকদের দাবি সরকার যাতে করোনার এ সময়ের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ব্যাংক লোনের কিস্তি এবং অন্যান্য বিল ও ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দিয়ে এ ক্ষতি কাটানোর সুযোগ দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com