ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন না করে অন্য দল থেকে আসা সুবিধাভোগীদের পদ দেয়ায় তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। নিজের সমালোচনার জবাবে জি এম কাদের বলেছেন, আমি কখনো লোভ, লালসা বা আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিই না। যারা দলে পদ বা পদোন্নতি চান, তাদের নাম বা পদবি দিলেই কি নেতা হওয়া যাবে? সে নেতার নেতৃত্ব দেয়ার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। যে মানুষের বিপদের দিনে তাদের পাশে দাঁড়াবে, তারাই প্রকৃত নেতা। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে দুর্নীতিবাজ নেই, যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। দেশের রাজনীতিতে আগামী দিনে জনগণের ম্যান্ডেড পেতে জাতীয় পার্টির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। দলকে আরো শক্তিশালী করতে তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল গুলশানের ইমানুয়েলস মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রতিনিধি সভায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় সভায় রওশন এরশাদের অনুসারী নেতারা কেউ ছিলেন না। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতীর সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু, পল্লবী থানার সভাপতি আমানত হোসেন আমানত, মিরপুর থানার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, দারুস সালাম থানার সভাপতি হাসান হামিদ, শাহ আলী থানার সভাপতি মাহফুজ মোল্লা, কাফরুল থানার সভাপতি শামসুল হক, রামপুরা থানার সভাপতি কাজী আবুল খায়ের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আখতার এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব সুলতান আহমেদ সেলিম, শফিউল্লাহ শফি, কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক ভূঁইয়া, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, ফখরুল আহসান শাহজাদা, আনিস উর রহমান খোকন, এম এ রাজ্জাক খান, সুমন আশরাফ, এটিইউ আহাদ চৌধুরী শাহীন, ডা: সেলিমা খান, মাহমুদুর রহমান মুন্নি, তাসলিমা আকবর রুনা, সীমানা আমির, ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দারুস সালাম থানার সভাপতি ক্ষুব্ধ হামিদ হাসান বলেন, আজকে দলে অনেক জুনিয়রদের জন্য আমাদের চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াতে হয়। আজকে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বাড়িতে অনেকে ঘুরঘুর করেন, যারা নেতাদের বাড়িতে ঘুরে বেড়ান, তাদের আসলে কিছু নেই। তারা তেল মেরে বেড়ান। অথচ তাদের প্রমোশন হয়। আমরা যারা তেল না মেরে রাজনীতি করি, তাদের কোনো প্রমোশন হয় না। ২৮ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের আগে নেতাদের সতর্ক হতে অনুরোধ করে হামিদ বলেন, নেতাকর্মীদের আমলনামা দেখে তবেই মূল্যায়ন করুন।
ফয়সল চিশতিকে উদ্দেশ করে মোহাম্মদপুর থানার সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, আজকে ঢাকা উত্তরকে নিয়ে অনেক নাটক হচ্ছে। একটি থানা কমিটি চালানোর অ্যাবিলিটি নেই, জনসভায় ৫০টা লোক আনতে পারে না, সে লোক কি না উত্তরের সভাপতি হন! দালালি ছাড়েন, দালালি ছেড়ে নেতা হন।
মিরপুর থানার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, সুবিধাভোগী নেতাদের উপরের কাতারে ঠাঁই দেয়া হয়। পোড় খাওয়া নেতাদের মূল্যায়ন হয় না। বিমানবন্দর থানার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম নয়ন বলেন, অনেক উটকো লোক দলে ঢুকে পড়েছে। তারা গণ্ডগোল করছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগে সতর্ক থাকতে হবে। অযোগ্য লোককে দলে ঢুকালে দল দুর্বল হয়ে পড়বে। রামপুরা থানার সভাপতি আবুল খায়ের, পল্লবী থানার সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম চুন্নু, বাড্ডা থানার সভাপতি মহিউদ্দিন ফরাজী, উত্তরা পূর্ব থানার সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান মাসুমসহ আরো অনেকেও সভায় উত্তরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ জানান। তাদের সাথে সুর মিলিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, আমাদের দলে কিছু ক্ল্যাসিকাল ধূর্ত আছে। তারা নানা কানকথা ছড়িয়ে ও ষড়যন্ত্র করে দলকে নষ্ট করে দিতে চান।
ক্ষোভের জবাবে জি এম কাদের বলেন, নেতাদের প্রমোশনের কিছু ক্ষেত্রে ভুল ছিল আমাদের। নেতারা কে কত দিন ধরে দলে আছেন, তাদের কার্যক্রমের কোনো সঠিক রেকর্ড নাই। আমরা কাজ করছি। কথা দিচ্ছি, সব ক্ষোভ ও অভিযোগের জবাব আমরা দিতে পারব। তিনি বলেন, মানুষ এখন সামাজিক নিরাপত্তা খোঁজে। যে নেতারা তাদের বিপদের দিনে তাদের পাশে দাঁড়াবেন, তারাই প্রকৃত নেতা।
সভায় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ প্রশমনে মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা সরকারের বিরুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়ে বলেন, জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেও তৃণমূলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ওপর তাদের নেতাকর্মীরা ‘জুলুম-নির্যাতন’ করছেন। জুলুম-নির্যাতন করার জন্য আমরা তাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসিনি। নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখেনি। আমরা পার্লামেন্টে গিয়ে এর জবাব চাইব। তৃণমূলে জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের কারো নিগ্রহের শিকার হলে তা সাথে সাথে তাকে জানাতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আজকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের গ্রাস রুটের কর্মীরা আমাদের হুমকি দেন। আমরা আওয়ামী লীগকে বলব, আপনাদের নেতাকর্মীদের সোজা করেন। নইলে আমরা জানি কিভাবে সোজা করতে হয়। সময় আসুক। জবাব কাকে বলে, আন্দোলন কাকে বলে আওয়ামী লীগকে আমরা দেখিয়ে দেবো।