শেখ মণি ও শেখ সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ও বহিষ্কৃত স্বেচ্ছাসেবকলীগ প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অপর দিকে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ ৫০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অপর দিকে ব্যাংকিং খাতের বহুল আলোচিত মুখ ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ ২২ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ক্লাবের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ, ক্যাসিনো, সন্ত্রাস, ঘুষ, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ও সম্পদের উৎস জানতে বহুমুখী তদন্তের অংশ হিসেবে এ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। নজর রাখা হয়েছে, আলোচিত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকের লকারে থাকা সম্পদ, তাদের প্রতিষ্ঠান ও নামে-বেনামে থাকা সম্পদ ও আয়কর নথির ওপর। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচারের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে চলমান অভিযানে বিভিন্ন নেতার বাসায় ও ব্যাংকে থাকা শত শত কোটি টাকার উৎস সম্পর্কে তদারকি করা হচ্ছে। গোয়েন্দাসংস্থাগুলো কোটি কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে কাজ করছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তিন সংস্থার চাহিদা মাফিক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সাথে তিন সংস্থার নির্দেশ মতো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আলোচিত দুই পরিবারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার চিঠি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি রাজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্তে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১১৬-এ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আলোচিত ব্যক্তি ও তাদের কোম্পানির নামে ব্যাংকে পরিচালিত সব হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন, অর্থ স্থানান্তর স্থগিত রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল যাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, বাবার নাম লেখা হয়েছে মৃত শেখ নুরুল হক ও মাতা মৃত মোছা: আছিয়া বেগম; শেখ ফজলুর রহমান মারুফের স্ত্রী সানজিদা রহমান, তার পিতার নাম লেখা হয়েছে মৃত শেখ গোলাম মোহাম্মদ ও মাতা মৃত কানিজ সুলতানার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। সেই সাথে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে তাদের দুই প্রতিষ্ঠান পি২৪ গেমিং কোম্পানি ও পি২৪ ল’ফার্ম লিমিটেডের। একই সাথে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোল্লাহ মোহাম্মদ কাওছার, স্ত্রী পারভীন সুলতানা, মেয়ে নুজহাত নাদিয়া নিলা ও তাদের প্রতিষ্ঠান ফাইন পাওয়ার সলিউশনসের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
এ দিকে গতকাল সোমবার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ ৫০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। ৫০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি শামসুল হক চৌধুরী, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর প্রধান সেলিম, যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, কৃষক লীগের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক।
দুদকের ওই চিঠিতে অভিযুক্তদের কয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, অ্যাকাউন্টে কত টাকা, কবে কখন কার কার সাথে লেনদেন হয়েছে এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার দুই সংসদ সদস্যসহ ব্যাংকিং খাতের বহুল আলোচিত একজন সাবেক এমডিসহ ২২ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, ব্যাংক পাড়ায় বহুল আলোচিত ব্যক্তি হলেন প্রশান্ত কুমার হালদার। তিনি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সের এমডি ছিলেন। এর আগে তিনি আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। রিলায়েন্স থেকে তিনি এমডি হন এনাআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের। গ্লোবাল থেকে হঠাৎ করে তার চাকরি চলে যায়। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে তার বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঘটক পাখি ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব তলব : এদিকে গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বিয়ে-শাদি ঠিক করে দেয়া ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত গাজী আশরাফ হোসেন ওরফে ঘটক পাখি ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। গতকাল ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, মেসার্স ঘটক পাখি ভাই (প্রা.) লিমিটেড এবং এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফ হোসেন ও পরিচালক সুলতানা বেগমের (বেবি) সব ধরনের আমানত, বিনিয়োগ ও ভল্টে থাকা সম্পদ সম্পর্কে তথ্য আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।