করোনা ভাইরাস চিরতরে নির্মূল হবে না, বরং ‘কোনো না কোনোভাবে তা চিরকাল থাকবে’- এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্য সরকারের একজন শীর্ষ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুই বছরের মধ্যে করোনা ভাইরাস দূর হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করার পর পরই এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন স্যার মার্ক ওয়ালপোর্ট। ব্রিটিশ সরকারের জরুরি বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা দলের এই সদস্য বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর টিকা নিয়ে টিকে থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়েসুস শুক্রবার বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি যে হারে উৎকর্ষ সাধন করেছে এবং যদি শিগগিরই টিকা উদ্ভাবন সম্ভব হয়, তা হলে আশা করা যায় যে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এ ভাইরাসকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হবে বিশ্ব। এ জন্য তিনি অবশ্য জাতীয় ঐক্য ও বৈশ্বিক সংহতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া স্প্যানিশ ফ্লু তিন ধাক্কায় বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় চালায়। প্রথমে এ রোগ যুক্তরাষ্ট্রে ধরা পড়লেও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপসহ পুরো বিশ্বে।
১৯১৮ সালের মহামারীর উদাহরণ টেনে গেব্রিয়েসুস সাংবাদিকদের বলেন, স্প্যানিশ ফ্লু মোকাবিলা করতে দুই বছর সময় লেগে গিয়েছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসকে মুছে ফেলা এর চেয়ে কম সময়ে সম্ভব।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থানের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন স্যার ওয়ালপোর্ট। তিনি বিবিসি রেডিও টুডেকে বলেন, বিশ্বব্যাপী টিকার মাধ্যমেই কোভিড-১৯ রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। গুটিবসন্ত যেমন টিকার মাধ্যমে চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল, করোনার ক্ষেত্রে তা হবে না বলে মনে করেন তিনি। এ জন্য বিশ্ববাসীকে নিয়মিত বিরতিতে করোনার টিকা নিতে হবে।
আধুনিক যুগের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ১৯১৮ সালের মহামারীতে মারা যায় অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতের তুলনায় যা পাঁচগুণ বেশি। আর আক্রান্ত হয় ৫০ কোটিরও বেশি।
স্যার ওয়ালপোর্ট স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সেই সময় পৃথিবীর জনসংখ্যা ও যোগাযোগ যে অবস্থায় ছিল আজকে এসে তা একই জায়গায় নেই। তিনি সতর্ক করেছেন, করোনা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিপর্যয় ডেকে আনবে। সুতরাং লকডাউনের পরিবর্তে বিকল্প উপায় বের করতে হবে, যেন মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো যায়।
এদিকে ইউরোপে করোনা ভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও আবার প্রকোপ বাড়ছে। একে উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন স্যার ওয়ালপোর্ট। পর্যটকদের আনাগোনার পাশাপাশি অবাধ মেলামেশার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কার্যকরী ও নিরাপদ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দিকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিজ্ঞানী।