ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে টিকাটুলীর কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঞ্জুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল।
এসময় দেখা গেছে, রাস্তায় কয়েক ‘শ মানুষ কাউন্সিল মঞ্জুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। মিষ্টিও বিতরণ করতে দেখা যায় অনেকেকে। বিক্ষোভকারীরা জানায়, মঞ্জু কারণে রাজধানী সুপার মার্কেট সহ আশপাশের লোকজন অতিষ্ঠ।
টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেটের এক দোকানদার বলেন, রাজধানী সুপার মার্কেট ও ফুটপাতে মঞ্জু বড় ধরনের চাঁদাবাজি করত। সে রাজধানী সুপার মার্কেটের সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর নড়িয়া। থাকতেন হাটখোলা ১৫/২ গ্লোবনিবাসের একটি ফ্ল্যাটে।
ব্যবসায়ীরা জানায়, সে ঢাকায় থাকলেও তার পরিবার থাকে আমেরিকাতে। সেখানে স্ত্রী, ছেলে সন্তান সবাই স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদাবাজি করে সব টাকা আমেরিকায় চালান করত মঞ্জু। বিদ্যুৎ বিল দিতে কখনো এক দিন দেরি হলেও সে দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিত। অন্যদিকে দোকানদারদের কাছ থেকে এভাবে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হলেও বিদ্যুৎ অফিসে মার্কেটের লাখ লাখ টাকা বিল বকেয়া থেকে যায়। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে নিজেই আত্মসাৎ করতেন।
মার্কেট মসজিদের সাবেক ইমাম হাফেজ মোঃ আব্দুর রউফ জানান, তাকে সম্প্রতি মসজিদ থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তার দু মাসের বেতন এখনো পর্যন্ত পাওনা রয়েছে। তার অভিযোগ, দান বাক্স সহ মসজিদের অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখায় তার বিরুদ্ধে মঞ্জু এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানায়, মঞ্জু বিভিন্ন উৎস থেকে মসজিদের আয়ের টাকাও আত্মসাৎ করেন। অথচ মসজিদের ইমামের বেতন মাত্র ৭ হাজার ৫০0 টাকা হলেও তা পরিশোধ করতেন না নিয়মিত।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাউন্সিলর মঞ্জু টানা ১৭ বছর ধরে মার্কেটের দায়িত্বে রয়েছেন। মঞ্জুসহ আরো একটা গ্রুপ আছে যারা মঞ্জুকে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য কাজে সব সময় সহায়তা করত। তাদের মধ্যে সাইদুল, মোরশেদ, মাওলানা আলামিন, আওলাদ, নাজমুল, ট্রাক স্ট্যান্ডের আদম আলী, হক, তেল মার্কেটের মাখন হাজি, ফারুক, বেডিং আফজাল, এহসান, ভূঁইয়া মিলন রয়েছেন।
রাজধানী সুপার মার্কেট এর দোকানদার সাখাওয়াত বলেন, দোকানের জামানত ৭ লাখ টাকা থাকলেও সে যেকোন সংস্কারকাজের জন্য আলাদা টাকা নিত। প্রতিমাসে জেনেরেটর বাবদ ১৭৮৮টি দোকান থেকে একশত পঁচাত্তর টাকা করে সে নিতো। অথচ সেখানে খরচ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। রাজধানী সুপার মার্কেট দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ অবস্থায় কোন সংস্কার কাজ তিনি করেননি। এসব বিষয়ে তার অফিসে অভিযোগ নিয়ে গেলে সে নতুন করে টাকা চাইতো।
ব্যবসায়ীরা জানায়, দারোয়ানের আয়ের অংশ থেকে ও সে আত্মসাৎ করত। মার্কেটের মূল গেট এলাকায় পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেখানে আলাদা দোকান বরাদ্দ দিয়ে লাখ লাখ টাকা প্রতি মাসে হাতিয়ে নিতেন। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।