ফলাফল কী হবে তা জেনেও আসন্ন সব উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ তারা বারবার উন্মোচন করতে চান বলেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া করোনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। নির্বাচনকে ঘিরে মাঠের রাজনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।
একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত ৫টি আসনের সবগুলোর উপনির্বাচনেই অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ৬ মাস ধরে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে গতি আনতে ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতেই উপনির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ ছাড়াও রাজধানীর প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দুইটি আসন বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে না দেয়াও নির্বাচনে থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। বাকি উপনির্বাচনগুলোতেও সময় হলে দলের নীতিনির্ধারকরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিনা চ্যালেঞ্জে কোনো নির্বাচনই আমরা ছেড়ে দিতে চাই না। আমরা জানি, ফলাফল কী হবে। তারপরও নির্বাচনে থাকতে চাই। কারণ অনেকগুলো। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ বারবার উন্মোচন করতে চাই। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় নেতাকর্মীরা এলাকায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন না। নির্বাচন উপলক্ষে তারা কিছুটা হলেও এসব কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারেন। গত ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা এবং ১০ জুলাই ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন মারা যান।
বিএনপির নেতাদের মত অনুযায়ী, এই দু’টি আসন বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে না দেয়ার কারণ দেশের নানা প্রান্তে জোর করে নির্বাচনের ফল ছিনিয়ে নিলেও রাজধানীতে সেটি কঠিন। কেননা, সংবাদ মাধ্যম, বিদেশী পর্যবেক্ষকরা এখানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন। এ ছাড়াও রাজধানীর ভোটারদের সচেতনাতাও বেশি। ফলে সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনিয়ম করলেও সেটি বেশি করে প্রচার হওয়ার ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এদের সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যায়। বিএনপি যদি ভোটে অংশ না নেয় তাহলে এই বার্তা পৌঁছানোর সুযোগ থাকে না। তাই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, আগেভাগে ঘোষণা না দিয়ে তফসিল হওয়ার পর উপ-নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোতে অংশ নেয়ার ঘোষণা আসবে। গত ২ এপ্রিল পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ মারা যান। সেখানকার উপ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
জানা গেছে, উপনির্বাচনে অংশগ্রহনে বিষয়টি ইতিবাচক ধরেই একাধিক প্রার্থী নিজেদের মতো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচন করতে চান বিএনপির সিনিয়র নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। এই আসনে গত নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন নবী উল্লাহ নবী। এবারো তিনি এই আসনে প্রার্থী। তবে তার বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের কারো কারো মধ্যে নেতিবাচক অবস্থানও রয়েছে।
নওগাঁ-৬ আসনে এবারো প্রার্থিতা নিয়ে আপন দুইভাইয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিএনপি সরকারের সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর আলমগীর কবির ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু এবার নির্বাচন করতে চান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী ছিলেন আলমগীর কবির।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটে লড়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। আরো তিনজন প্রার্থী এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন চান। তারা হলেন- নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, সেলিম রেজা ও টি এম তাহজিবুল এনাম।
ঢাকা- ১৮ আসনে উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মো: বাহাউদ্দিন সাদী ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তবে কফিল উদ্দিন ও সাদীর মধ্যে যে কারো সম্ভাবনা বেশি রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন।
এ দিকে বিশ্বব্যাপী কোভিড- ১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম-সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা আর বাড়ছে না বলেও জানা গেছে। বাড়লেও উপনির্বাচন হওয়ার এলাকায় সেটি স্থগিত থাকবে বলে জানা গেছে।