সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ ফেরত দিচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এই ঋণ করা হয়েছিল সরকারি মালিকানাধীন ৫টি ব্যাংকের কাছ থেকে। এই ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রুপালী ও বেসিক ব্যাংক। এত বিশাল পরিমাণ ঋণের মধ্যে ফান্ডেড বা নগদ ঋণ বকেয়া রয়েছে ১৬ হাজার ৩৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর নন-ফান্ডেড বা এলসি, ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে নেয়া ঋণ বকেয়া রয়েছে আরো ১৩ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর কাছে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শ্রেণী বিন্যাসিত ঋণ-এর জুলাই ২০২০ ভিত্তিক বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, অনেক চেষ্টা করেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী এবং বেসিক ব্যাংক কর্তৃক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে ২০০২ জুলাই মাসের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১৬৩৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৬৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা যা মোট বকেয়া ঋণের শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ। এরমধ্যে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ১২০৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ২৩৪০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা অগ্রণী ব্যাংকের ৫৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ১৩৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ৪০ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের মোট শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের দুই কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিল্প খাতের ৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী এবং বেসিক ব্যাংকের পাওনা ৯ হাজার ৭৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ ছয় প্রতিষ্ঠান হলোÑ বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি)।
এ ছয় প্রতিষ্ঠান ৫ ব্যাংকের কাছ থেকে ফান্ডেড ঋণ বা নগদ ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৬৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর নন-ফান্ডেড ঋণ বা এলসি, ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে নিয়েছে ১ হাজার ১৬২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ৫ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি টাকা পায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৫ ব্যাংক ফান্ডেড ঋণের ৬ হাজার ৬১০ কোটি ২৮ লাখ এবং নন-ফান্ডেড ঋণের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পায়।
বাণিজ্যিক খাতের তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বাংলাদেশ জুট করপোরেশন এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের কাছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৫৪ কোটি ৫ লাখ টাকা পায় ব্যাংকগুলো।
কৃষি এবং মৎস্য খাতের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে সরকারি ৩টি ব্যাংক ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা পায়। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৪৯৪ কোটি, জনতা ৭৫৯ কোটি ৪৬ লাখ এবং রূপালী ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা পায়।
গ্যাস, পানি এবং বিদ্যুৎ খাতের ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপাই অ্যান্ড সুয়ারেজ অথোরিটি, ঢাকা ওয়াসা এবং বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল করপোরেশন। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাওনা ৭ হাজার ৫৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের বকেয়া ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ ছয় প্রতিষ্ঠান হলো- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন। এর মধ্যে বিমানের কাছেই পাওনা ৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ৫ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ বিমানের কাছে পুরো টাকাটা পায় রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এই টাকা উদ্ধারের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবগুলো আর্থিকভাবে অসচ্ছল।