খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে এক হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় এসব কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করবেন। পরিকল্পনা কমিশন থেকে এর অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে অধিদপ্তর। ডিম-খিচুড়ি, সবজিসহ অন্যান্য খাবার রান্না ও প্রসেসিং শিখতে প্রাথমিকভাবে এ যাত্রার জন্য চাওয়া হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। এ বিষয়ে দেশে প্রশিক্ষণের জন্য আরও ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণ বাবদ মোট খরচ চাওয়া হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। যদিও পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইং বিভিন্ন খাতে খরচ ও করোনার সময়ে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, এ খরচ বাদ দেওয়ার জন্য।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক মো. রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কীভাবে খিচুড়ি রান্না করা হয়, এর পরিবেশ ও পরিবেশন দেখতে এই প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু কর্মকর্তা বিদেশ সফর করবেন। কবে কতজন বিদেশ সফর করবেন সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বিভিন্ন প্রকল্পের অভিজ্ঞতা অর্জনে বিদেশে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে সরকারি অন্তত এক হাজার কর্মকর্তাকে শুধু খিচুরি রান্না শিখতে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জনগণের টাকা খরচ করে এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল সোমবার প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন। ডিপিই এর এসব ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। একইসঙ্গে ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে নানা খাতে। ৫ কোটি টাকার বিদেশ ভ্রমণ কমাতে বলা হয়েছে।
প্রাইমারি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি ভারতে চালু রয়েছে। এজন্য ৫ থেকে ৬ জনের একটা টিম ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যাবে এবং স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শিখবে। ফলে এ খাতে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো হয়েছে বলে জানায় পরিকল্পনা কমিশন।
এ ছাড়া প্রকল্পের আরও কিছু অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে সামাজিক সংহতির জন্য সাড়ে সাত কোটি ও পরামর্শকের জন্য ছয় কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আট লাখ টাকা দিয়ে একটি এসি ও দুই কোটি টাকা দিয়ে ফার্নিচার ক্রয়ের বিষয়েও আপত্তি তুলেছে। মিটিং, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই। ওই প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা খাবার ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া খাবার সরবরাহের জন্য ১৭ কোটি এবং প্লেট কেনার জন্য ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই ব্যয় মূল্যায়ন ছাড়াই কমানো সম্ভব বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।
ডিপিই ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, সফরে গিয়ে কর্মকর্তারা এ ধরনের প্রকল্পের জন্য বাজার থেকে কীভাবে দ্রব্যাদি ক্রয় করা হয়, খিচুরি রান্নার নিয়ম এবং তা বিতরণের উপায় সম্পর্কে ধারণা নেবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই, পরিকল্পনা কমিশন এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের কর্মকর্তারা পাঁচ বছরের মধ্যে এই সফরের সুযোগ পাবেন।
স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক এবং ডিপিই কর্মকর্তা রুহুল আমিন খান বলেন, ‘পাঁচ বছরে এক হাজার কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কীভাবে খিচুড়ি রান্না করতে হয় এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় সে বিষয়ে তারা ধারণা নিতে পারবেন। এই কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে।’ এজন্য বিদেশি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
রুহুল আমিন খান আরও বলেন, গত বছরের ভারতের কয়েকটি স্কুল তারা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কীভাবে খাবার রান্না হয় সে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন। আরও কর্মকর্তাকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে চান বলে তিনি জানিয়েছেন। অবশ্য আগামীতে কোন দেশ তারা ভ্রমণ করবেন সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্প পাস হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের আওতায় এসইউভি ও ছয়টি মাইক্রোবাস কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করেত চায় ডিপিই। এছাড়া গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেড় কোটি, জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্টের জন্য ৬০ লাখ এবং যাতায়াতের জন্য ২০ লাখ টাকা চেয়েছে। পরিবহন সংক্রান্ত এই ব্যয়েরও যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর পাশাপাশি পরিদর্শন ও মূল্যায়নের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সব ধরনের বিদেশ সফর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’ সবকিছু খতিয়ে দেখে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।