শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন

ব্যাংকের নগদ অর্থের ৬৭ শতাংশই সরকারি কোষাগারে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২০৭ বার

ব্যাংকের মোট তরল সম্পদের ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশই সরকারের কোষাগারে আটকে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে ব্যাংকের মোট তরল সম্পদ রয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারেই রয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এ হিসাব গত ৩০ জুন ভিত্তিক।

ব্যাংকারোা জানিয়েছেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এখন নিরাপদ বিনিয়োগ হলো সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড। এ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের অর্থ যেমনটি থাকে নিরাপদ, তেমনি যেকোনো আপদকালীন সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়ানো যায়। অপর দিকে, ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের একটি অংশ বাধ্যতামূলক তরল সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়, যা ব্যাংকিংয়ের ভাষায় এসএলআর বলে। এই এসএলআর সংরক্ষণেও সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড কাজে লাগে। পাশাপাশি অর্থ অলস না রেখে কিছুটা হলেও মুনাফা পাওয়া যায়। এ কারণে ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগের বড় একটি অংশই এখন সরকারের কোষাগারে রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট তরল সম্পদ ছিল ২ লাখ ৭১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর হাতে রয়েছে মাত্র ২৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা, যা বিনিয়োগযোগ্য তহবিল হিসেবে পরিচিত। ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলে এ অর্থ তারা বিনিয়োগ করতে পারত। ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের পর বাড়তি এ অর্থ ব্যাংকের খাতায় অলস পড়ে রয়েছে। এ হিসাবে মোট তরল সম্পদের মাত্র ৭ শতাংশ রয়েছে বিনিয়োগযোগ্য তহবিলে। সোনালী ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর রক্ষিত হিসাবে রয়েছে ১৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা, যা মোট তরল সম্পদের ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।

ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বাধ্যতামূলক নগদ জমা (সিআরআর) রয়েছে ১৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সিআরআর রয়েছে মোট তরল সম্পদের সাড়ে ১৫ শতাংশ। বাকি ১৫ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা রয়েছে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রায়। আর ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা রয়েছে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ আকারে। অর্থাৎ সরকারের কোষাগারে রয়েছে ব্যাংকগুলোর মোট তরল সম্পদের ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর বাইরেও ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে, যা বন্ধক রেখে আপদকালীন নগদ অর্থের সঙ্কট মেটানো হয়েছে। সাধারণত, ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থের সঙ্কট দেখা দিলে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিতে পারে। একে ব্যাংকিং ভাষায় রেপো বলা হয়।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংক সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ দিয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছে না। ঋণ দিলে তার একটি বড় অংশই খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। উপরন্তু তাদের নানা সময়ে নানা ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃত উদ্যাক্তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। এর ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত হারে হচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি।

এ বিষয়ে দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেউ যখন জানতে পারে প্রতি মাসেই একটি ব্যাংক লোকসান দিচ্ছে, তবে জেনেশুনে বিনিয়োগকারীরা ওই ব্যাংকে বিনিয়োগ করবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোও এখন নিরাপদ বিনিয়োগের দিকেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। বেসরকারি খাতে কম ঋণ দিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ব্যাংকগুলো এ মুহূর্তে ঢালাওভাবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে যাবে না। দেশের সামগ্রিক অবস্থা ভালো হলেই তখন ব্যাংক বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com