বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান আইনজীবীকে ‘কুপিয়ে হত্যা করল’ ইসকন সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ চিন্ময়কে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে ভারতের বিবৃতি মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

বিএনপি এবার পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে চায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২০২ বার

বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, বিভাগীয় সদর দপ্তর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা মহানগরীর কোনো কোনো কমিটির মেয়াদও পার হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির কোনো কমিটি নেই। মাদারীপুরের কমিটির কার্যক্রমও স্থগিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঘোষিত ২৭টি জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত ছয় মাস স্থগিত থাকার পর আবার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। এবার শুধু জেলা অথবা মহানগর কমিটি নয়; উপজেলা, পৌর কমিটিও গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা পৌর নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল উপায়ে আলোচনা করতে সবাইকে ‘জুম ডাউনলোড’ করতে বলা হয়েছে।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের শুরুতে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের চিন্তা হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে থানা-পৌর-ইউনিয়নসহ সব পর্যায়ের কমিটি দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। তখন পুনর্গঠনের দায়িত্বে ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ (তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব)। তিনি ১৩টি জেলা কমিটি করতে সক্ষম হন। এরপর পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ শাহজাহানকে।

তিনি ৫৪টির মতো কমিটি করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে পুনর্গঠন কাজ শুরু হয়েছে। তিনি যেসব আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন, সেসব কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। একদিকে কমিটি করা হয়, আরেকদিকে মেয়াদ পার হয়। এর মধ্যে কিছু নেতাকে ‘সাইজ’ করা ছাড়া খুব একটা দৃশ্যমান কাজ হয় না বলে মনে করেন ওই নেতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুকে বাদ দিয়ে ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজশাহী মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। সে কমিটিও এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।

একই সময়ে সভাপতি নাদিম মোস্তফার কমিটি ভেঙে দিয়ে রাজশাহী জেলার প্রথমে তোফাজ্জল হোসেন তপুকে সভাপতি ও মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটিও ভেঙে দিয়ে আবু সাঈদ চাঁদকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হলেও সে কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। মিনু ও নাদিমকে বিরোধীরা (কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা) যৌথভাবে বিএনপির রাজনীতিতে ‘সাইজ’ করলেও রাজশাহীতে আর ঘুরে দাঁড়ায়নি দলটি।

মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও পটুয়াখালী জেলা বিএনপি আটকে আছে আলতাফ হোসেনের হাতে। একইভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ বরিশাল মহানগর বিএনপি আটকে আছে মজিবুর রহমান সরোয়ার জটিলতায়। এ রকম বেশকিছু কমিটি ‘নেতাদের মারপ্যাঁচে’ আটকে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মূল কারণ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব। জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ২২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মেয়াদ থাকলেও বাকিগুলো নেই। এগুলোর মেয়াদও শেষের দিকে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ সাংগঠনিক কার্যক্রম কাউন্সিলের একটা অংশ। অর্থাৎ আমাদের দেশব্যাপী প্রতিটি জেলা, উপজেলা বা থানার যতটা ইউনিট আছে- সেগুলো কাউন্সিলের আগেই সম্পন্ন করতে হয়। সেই কাজটা আমাদের শুরু হয়েছে। আমি বলব, বিশ্ব ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি কখন কাউন্সিল করার সুযোগ সৃষ্টি হবে, সে জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। একটা সময় কাউন্সিল হবে। একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, দল পুনর্গঠন নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা হলো- জেলায় ৩ মাসের জন্য প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি করা। তারা ইউনিয়ন-থানাসহ সংশ্লিষ্ট জেলার সব পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে অথবা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বের করবেন। সব শেষে জেলায় কাউন্সিল করে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। জেলা কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলার নেতারা তাদের সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমিটি করেছেন কিনা, তাও দেখভাল করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে বিএনপির জেলা সম্মেলন সব কয়টির সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এক নেতা বলেন, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের আগেও সব জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করতে পারেনি বিএনপি। সে হিসেবে এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পক্ষপাতিত্ব আচরণ ও নেতাদের মারপ্যাঁচসহ অভিযোগের কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আরও জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে।

করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় ছয় মাস কমিটি গঠন ও পুনর্গঠনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আবার তা শুরু করেছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে থাকা, করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমান নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কাউন্সিল করা যায়নি। তাই আগামী বছরের প্রথম দিকে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করার টার্গেট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজনের কাজও চলবে।

পুনর্গঠনের বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে রাজশাহী বিভাগের সব কাজ শেষ করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও ফরিদপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, আশা করছি শিগগিরই পুনর্গঠনের কাজ শেষ করা যাবে।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মশিউর রহমান বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে আমরা ৩ থানা ও ৩ পৌর কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করেছিলাম। এর বিরুদ্ধে একটি গ্রুপ আপত্তি জানালে কেন্দ্র থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার পর একটি থানা ও পৌর কমিটি দিয়েছি। এখন আবার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে সব কমিটি গঠন করা হবে।

তবে কিছু জেলা কমিটির নেতাদের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর কাউন্সিলের মাধ্যমে ৮টি থানার মধ্যে ৬টিতে কমিটি দিয়েছে। বাকি দুটির কমিটিও প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়াও ৫৭টি ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন কাজ শেষ।

গাজীপুর জেলা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের ওপর যে আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়েছেন, তার প্রতিদান দিতে আমরা চেষ্টা করেছি। সবার সহযোগিতায় কাউন্সিলের মাধ্যমে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দিয়েছি।’ বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, এ জেলার অধীনে ১২ উপজেলা ও ১২ পৌরসভা আছে। এ ছাড়া ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন তো রয়েছেই। পুনর্গঠনের অর্ধেক কাজ হয়েছে। আশা করছি, সব কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে জেলা সম্মেলন করতে পারব।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com