জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে জয়ের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দলটি। এতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে অন্য আসনের নেতাকর্মীরা। বাকি চারটি আসনের উপনির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় দলটি। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে জয় নিশ্চিত করার চিন্তাভাবনা থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে আসনভিত্তিক কমিটি গঠন করে কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোহাম্মদ নাসিম, পাবনা-৪ আসনের এমপি শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এবং নওগাঁ-৬ আসনের এমপি ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে আসন পাঁচটি শূন্য হয়ে যায়। ঢাকা-৫ আসনে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মুন, ঢাকা-১৮ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাবিব হাসান, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মরহুম এমপি মোহাম্মাদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়, পাবনা-৪ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান মো: নূরুজ্জামান বিশ্বাস এবং নওগাঁ-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন হেলালকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
ইতোমধ্যে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: নূরুজ্জামান বিশ্বাস জয়লাভ করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ অক্টোবর।
আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপনির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এলাকায় গিয়ে প্রতিনিধি সভা ও মতবিনিময় করছেন। যে আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশি ওই আসনে বিবদমান দুই গ্রুপের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে মাঠে নামানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও তৎপর রয়েছেন। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচন উৎসবমুখর করার জন্যও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নওগাঁ-৬, সিরাজগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮ আসনে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব শিথিল হলেও ঢাকা-৫ আসনে জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। মরহুম এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল ও তার সমর্থকরা এখনো দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছতে পারেননি। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। নিয়মিত প্রতিনিধি সভা, মিছিল, মিটিংসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনু নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবমুখর পরিবেশে মিছিল, মিটিং, নির্বাচনী সভাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মরহুম এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা ছিলেন আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। কিন্তু তার ছেলে মশিউর রহমান সজল মনোনয়ন না পাওয়ায় আমার পক্ষে মাঠে নামছেন না। কেন্দ্রীয় নেতারাও তার সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছেন, নির্বাচনী মাঠে নামার জন্য অনুরোধ করেছেন। নেতাদের কথাও তিনি শুনছেন না। তবে সজল মাঠে না নামলেও নির্বাচনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
উপনির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে ইতোমধ্যে আমরা জয়লাভ করেছি। বাকি চারটি আসনেও আমরা জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।
প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এলাকায় গিয়ে প্রতনিধি সভা করছি। নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করছি। নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন প্রসঙ্গে এস এম কামাল হোসেন বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।