কুইন্স কাউন্টি ওমেন্স বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, ল’ইয়ার রেফারেল অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস ফর দ্য সার্ভিস ফর দ্য নিউইয়র্ক স্টেট বার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন অ্যাটর্নি অ্যাট ল’ সোমা সায়ীদ আগামী নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-২৪-এ কাউন্সিলম্যান নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখন তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কাজ করছেন। বিভিন্ন মানুষের সাথে মতবিনিময়ও করছেন। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টিও ঘোষণা করেছেন ১১ অক্টোবর। তার ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে এবং জুমের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার নির্বাচনী প্রচারণার কাজের অংশ হিসাবে ওয়েবসাইট উন্মোচন করা এবং পেইজ তৈরি করেছেন। উদ্বোধন করেছেন ১১ অক্টোবর। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য রেজিস্টার্ড করেছেন।
তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে একাধিক। এরমধ্যে রয়েছে হেলথ জাস্টিস, ইকোনমিক জাস্টিস, পুলিশ রিফর্ম, অ্যাফোর্ডাবল হাউজিং, এডুকেশন। এছাড়াও জাস্টিস ও ইক্যুয়ালিটির বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কোন কোন সেক্টরে কী কী কাজ করবেন তাও পরিকল্পনা করেছেন।
হেলথ জাস্টিস এর ব্যাপারে তিনি বলেন, সিঙ্গেল পেয়ার হেলথ কেয়ার আমাদের নিউইয়র্ক সিটি বাসীর অর্থ্যাৎ নিউইয়ার্কারদের জন্য দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। সাম্প্রতিক রেন্ড রিপোর্টের মাধ্যমে জানা যায় যে, সিঙ্গেল পেয়ার হেলথ কেয়ারের মাধ্যমে নিউইয়র্কের নিম্ম আয়ের ৯০ ভাগ মানুষ যাদের ইনকাম আছে তারা প্রতি বছর ২৮০০ ডলার এবং স্টেট ১৫ বিলিয়ন ডলার বাৎসরিক সেভিংস করতে পারবে। আমি সিঙ্গেল পেয়ার হেলথ কেয়ারের জন্য ফাইট করবো।
ইকোনমিক জাস্টিসের ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্ষুুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার এখনই দরকার। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা না করা পর্যন্ত সিটি কখনো অর্থনৈতিকভাবে রিকভার/ সাবলম্বী হতে পারবে না। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতি মাসে ১০০০ ডলরের একটি গ্রান্ট (প্যান্ডামিক ভাতা) পাওয়ার এবং যে সব ব্যবসায়ীরা ২০০ হাজারের নীচে আয় করেন তাদের জন্য গ্র্যান্ট পাওয়ার জন্য একটি বিল নিয়ে আসবো। আমাকে নিউইয়র্কের অর্থনীতি রিকভার করতে কাজ করার সুযোগ দিন।
পুলিশ রিফর্ম বিষয়ে তিনি বলেন, অপরাধ, অপরাধই। সিভিলিয়ান কমপ্লেন রিভিউ বোর্ডকে ডিস্ট্রিক্ট এটর্নীর অফিসের সাথে রিপলেস/একীভূত/ অধিভুক্ত করতে হবে। এখনই সময় জবাবদিহি করার। পুলিশ প্রশাসন এবং সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে সহযোগিতার মাধ্যমে অনেক ভাল সম্পর্ক ও বিশ্বাস গড়ে তোলা সম্ভব। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। পাশপাশি ভাল এডুকেশন /শিক্ষা প্রোগ্রাম নিয়ে আসতে হবে। সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে আমাকে পুলিশ রিফর্মে সহায়তা করুন।
হাউজিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, অ্যাফের্ডাবল হাউজিং একটি মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার। আমাদের সিটি এই মৌলিক অধিকার পূরণে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যাফের্ডাবল হাউজিং বরাদ্দ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে হোমলেসদের জন্য আরও অনেক হোমলেস সেন্টার প্রয়োজন। সেটা করতে হবে। আমি প্রেভিটরী ল্যান্ডলর্ডদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো। অ্যাফের্ডাবল হাউজিংয়ের জন্য যে লোফল গুলো আছে আমি সেগুলো বন্ধের জন্য ফাইট করবো। নিউইয়র্ক সিটিকে স্বল্প আয়ের পরিবার এবং সিনিয়িরদের জন্য অ্যাফের্ডাবল হাউজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি অনুরোধ করবো আমাকে বেশি বেশি করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অ্যাফোর্ডাবল হাউজিংয়ের ব্যবস্থা করার সুযোগ দিন।
এডুকেশন এর ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলগুলো থেকে পুলিশ বের করতে হবে। স্কুলগুলো আমরা প্রিজনের মতো আর দেখতে চাই না। স্কুলে প্যান্ডামিক মোকাবিলা করার জন্য পিপিপিই এবং অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ ও আপডেট করতে হবে। ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের সাথে কাজ করে রিমোর্ট লানিং প্ল্যাটফর্মকে আরও মজুবত ও সহজ করতে হবে। পাবলিক হায়ার এডুকেশন এর জন্য আরও ফান্ড বরাদ্দ করতে হবে।। এবং কিউনিকে সম্পূর্ণ ফ্রি করতে হবে। ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষাকে আমাদের স্কুল ও কলেজগুলোতে স্থায়ী করতে হবে। আমি সব সময় ফেয়ার এডুকেশনের জন্য কাজ করছি। আপনারা আমাকে ফেয়ার এডুকেশন ব্যবস্থা মজবুত করার জন্য সহযোগিতা করুন।
আমি বলতে চাই, আমি সোমা সায়ীদ। আমি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ডিস্ট্রিক্ট-২৪ থেকে নির্বাচন করছি। আপনাদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো এবং বলবো আমি আপনাদের ভোট ও সহযোগিতা চাইছি। প্লিজ আমাকে ভোট দিন ও সহযোগিতা করুন।
উল্লেখ, অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশিয়ান নারী অ্যাটর্নি, যিনি ৯০ বছরের পুরোনো একটি সংগঠনের (কুইন্স, নিউইয়র্কের) প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। এটা অন্তত মুসলিম কমিউনিটি, দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশের কমিউনিটিকে রিপ্রেজেন্ট করেছে। তিনি জানান দিতে পেরেছেন যে আমরাও এগিয়ে আছি।
সোমা সায়ীদ একজন সংগ্রামী নারী। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাটর্নি, সংগঠক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নিজের নামে গড়ে তুলেছেন অ্যাটর্নি সোমা সায়ীদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। তিনি কাজ করেন নিজের ফার্মে। সেখানে তার রয়েছেন কয়েকজন সহকারী। এর বাইরেও বিভিন্ন ল’ইয়ার রয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি সিভিল ও ক্রিমিনাল দুই ধরনের মামলাই পরিচালনা করেন। । সোমা ২০০৪ সালে নিউইয়র্ক বারের সদস্য হন। ১৬ বছর ধরে নিউইয়র্কে আইন পেশায় জড়িত। তিনি কাজ করেন দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, দ্য ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ব্যাংকক্রাপসি কোর্ট, দ্য ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট ব্যাংকক্রাপসি কোর্ট, দ্য ইউএস ট্যাক্স কোর্ট এবং দ্য সেকেন্ড সার্কিট কোর্ট অব আপিলস। আইন পেশার পাশাপাশি নিজ কাজের জন্য একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
তিনি একজন সংগ্রামী নারী। ১২ বছর বয়সে টাঙ্গাইল থেকে বাবা-মায়ের সাথে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে আসার পর পরই স্বপ্ন দেখেন তিনি একজন অ্যাটর্নি হবেন। সেই হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। ভর্তি হন এখানকার মিডল স্কুলে। এরপর জ্যামাইকা হাইস্কুলে। সেখান থেকে হাইস্কুল ডিপ্লোমা করার পর ভর্তি হন কিউনির সিটি কলেজে। সেখানে আরবান লিগ্যাল স্টাডিজ বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ব্যাচেলর করার পর আলবেনিতে ল’ স্কুলে (ঞযব অষনধহু খধি ঝপযড়ড়ষ ড়ভ ঃযব টহরড়হ টহরাবৎংরঃু) চলে যান। সেখান থেকে জুরিস ডক্টর (জেডি) ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। গড়ে তুলেছেন নিজের নামে ল’ ফার্ম। ২০১৩ সালে সেটিকে ইনকরপোরেশনে রূপান্তর করেন। সেখানেই কাজ করে যাচ্ছেন।
তার বাবা আফতাব উদ্দীন সায়ীদ। তার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল আইন। মা আমেনা সায়ীদ ছিলেন শিক্ষিত নারী। মা বাংলাদেশে দুটি গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। মা ছিলেন একজন ধর্মভীরু, আধুনিকমনা মানুষ। তারা দুই ভাই দুই বোন। বাবা সরকারি চাকরি ছেড়ে এ দেশে এসে এমবিএ ডিগ্রি নেন, এরপর সিপিএ হন। তার আব্বা দীর্ঘদিন লেখালেখি করেছেন।
আগামী সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বলেন, আমি সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছি। এখন কাজ করছি। আমি নির্বাচন করার জন্য কেবল করতে চাই না। রান করতে চাই জয়ী হওয়ার জন্য। সহযোগিতা করার জন্য সবার এগিয়ে আসা দরকার। সমস্যা হলো ইয়াং জেনারেশন ও ওল্ড জেনারেশনের সঙ্গে আমরা যারা মিডলে আছি, তাদের একটি গ্যাপ আছে। এই গ্যাপটা দূর করতে হবে। কেউ নির্বাচন করলে তাকে পরাজিত করার জন্য আমাদের কমিউনিটির মধ্যে যাতে কোনো গ্রুপ তৈরি না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সময় এসেছে নিজেদের কমিউনিটি থেকে নেতা তৈরি করার। ভালো ও কোয়ালিফাইড ক্যান্ডিডেট দিতে হবে, তাকে সবাইকে সাহায্য করতে হবে। আমি আশা করছি, একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সবাই ভোট দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করবেন এবং জয়ী হওয়ার জন্য যত রকম সহযোগিতা দরকার সেটি করবেন। মনে রাখতে হবে, কেবল আমাদের কমিউনিটির ভোট হলেই চলবে না, অন্যান্য কমিউনিটির ভোটও প্রয়োজন হবে।