সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

দূষণে বিপর্যস্ত দিল্লিতে মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩৩৩ বার

মারাত্মক বায়ু দূষণে বিপর্যস্ত ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আজ থেকে গাড়ি-চলাচলে জোড়-বিজোড় (অড-ইভেন) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

যার ফলে রোজ প্রায় অর্ধেক প্রাইভেট ভেহিকল রাস্তা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

কিন্তু শহরে দূষণ যে সাঙ্ঘাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে এই ধরনের পদক্ষেপ আদৌ কোনও কাজে আসবে কি না, তা নিয়েও চলছে তুমুল বিতর্ক।

দিল্লিতে ইতোমধ্যেই ‘জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে – যার ফলে স্কুল-কলেজ বন্ধ, শিশু ও বৃদ্ধদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে।

শহর ছেয়ে আছে গাঢ় ধোঁয়াশায়, লোকেরা নানা শারীরিক উপসর্গে ভুগছেন। কিন্তু দিল্লিবাসী কীভাবে এই অসহনীয় পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচছেন?

সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম মধ্য দিল্লির একটি সদাব্যস্ত ট্র্যাফিক মোড় আর ঘিঞ্জি বাজার এলাকা করোলবাগে।

বাস-অটো-গাড়ি-স্কুটার-বাইক-রিক্সায় সোমবারের বিকেল সেখানে ভিড়ে ভিড়াক্কার, তার মধ্যে ছাই-ছাই ধোঁয়াশার আস্তরণ ঢেকে রেখেছে গোটা আকাশ।

গৃহবধূ নীলম কাপুর বিবিসিকে বলছিলেন, “শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে – আমার চোখে চশমা, তারপরও চোখে সারাক্ষণ জ্বালাজ্বালা করে।”

“আধঘন্টা ড্রাইভ করে ঘরে ফিরি, তারপরও বহুক্ষণ মাথাটা ভার হয়ে থাকে।”

অটোচালক সুরাজ কুমারকে রুটির জন্য রোজ পথে নামতেই হয়, কিন্তু দুচার ঘন্টা চালানোর পর তারও অসম্ভব কষ্ট শুরু হয়ে যায় – মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে।

দিল্লিতে পুলিশ সোমবার থেকেই প্রয়োগ করছে জোড়-বিজোড় গাড়ি চালানোর নিয়ম

“কিন্তু উপায় নেই বলে রাস্তায় থাকতেই হয়”, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন তিনি।

দিল্লির পার্কগুলোতে যারা জগিং বা হাঁটাহাঁটি করেন, তাদেরও রুটিন বিপর্যস্ত।

ডিয়ার পার্কে এক তরুণী যেমন বলছিলেন, “দূষণের এখন ওয়ার্কআউট করলেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে।”

বস্তুত দিল্লি শহরটা – যাকে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেই তুলনা করেছেন একটা ‘গ্যাস চেম্বারে’র সঙ্গে – শহরের সবাইকে যেন একসঙ্গে রোগী বানিয়ে তুলেছে।

দিল্লির লাং কেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড: অরবিন্দ কুমারের কথায়, “বাতাসে এই পর্যায়ে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ থাকলে তা থেকে চোখের যন্ত্রণা, লাল হয়ে চোখ থেকে জল পড়া, নাক জ্বালা জ্বালা করা, গলায় ইরিটেশন হবেই।”

“অ্যাস্থমা বা হাঁপানি রোগীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় এটা – যাদের ইনহেলার লাগত না তাদেরও এখন লাগছে।”

“যারা দিনে দুবার নিতেন তারা চারবার নিচ্ছেন। অনেককে স্টেরয়েডও নিতে হচ্ছে।”

এই পটভূমিতে দিল্লিতে আজ থেকে যে জোড়-বিজোড় গাড়ি চলাচলের নিয়ম চালু হল, তা নিয়েও কিন্তু মানুষজন দ্বিধাবিভক্ত।

ময়ূর বিহারের মিথিলেশ শর্মা যেমন বলছেন, “যান-চলাচল কিন্তু দূষণের তেমন বড় উৎস নয়।”

 

“মানুষের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন, দিল্লির আশেপাশে অসংখ্য দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানাগুলোই মূল সমস্যা। কাজেই অড-ইভেন করে বিশেষ কোনও ফারাক হবে না।”

নিত্যযাত্রী সুনীতা রাও আবার এখানে কিছুটা ভিন্নমত, রাস্তায় গাড়ি কমলে বাতাস কিছুটা ভাল হবে বলেই তার বিশ্বাস।

তবে তিনি মনে করেন, “মাত্র দিন পনেরোর জন্য নয় – জোড় বিজোড় গাড়ির পদ্ধতি স্থায়ীভাবে চালু হলে দূষণ পরিস্থতির উন্নতি হতে বাধ্য!”

তবে এত সাঙ্ঘাতিক দূষণের পরও দিল্লিতে একটা মানসিকতার সমস্যা রয়েই গিয়েছে।

এই শহরে দূষণ মোকাবিলায় সব মানুষ কিন্তু নিজের অভ্যাস, শখ-শৌখিনতা ছাড়তে প্রস্তুত নন।

সীমাপুরির নিম্নবিত্ত কলোনির এক বাসিন্দা যেমন বলছিলেন, “দিওয়ালিতে বাজি-পটকা না ফাটানোর জন্য কত বলা হল, মানুষ কি সে সব শুনল না কি? দূষণ তো যে-কে সেই হলই।”

আসলে ধর্মীয় উৎসবের দোহাই দিয়ে অনেকেই যেমন দিওয়ালিতে বাজি পোড়ানো ছাড়তে চান না, তেমনি অনেকে একদিনের জন্যও গাড়িতে চেপে কাজে আসার আরাম ত্যাগ করতে রাজি নন।

সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের ডিরেক্টর অনুমিতা রায়চৌধুরী তাই বলছিলেন, “আমি বলব আমাদের লাইফস্টাইল সংক্রান্ত চেঞ্জগুলো আনার ক্ষেত্রে একটা বিরাট রেজিস্ট্যান্স বা প্রতিরোধ কিন্তু রয়েই গিয়েছে।”

“সোজা কথায়, দৈনন্দিন জীবনে যে সহজ ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো আনলে দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইটা আরও সহজ হত আমরা সেগুলো যথেষ্ঠ পরিমাণে আনতে পারছি না।”

“অথচ অবাক লাগে, শহরটা যখন এমন মারাত্মক দূষণের কব্জায়, মানুষ যখন শ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছে না – তখন কিন্তু আমরা মানুষের মধ্যে প্রচন্ড রাগ দেখি, সবাই সমস্বরে বলেন এভাবে আর চলতে পারে না।”

জোড়-বিজোড়ের প্রথম দিনেই দিল্লির রাজপথে গাড়ির সংখ্যা কমেছে, তবে কমেনি ধোঁয়াশা

“পলিউশান মাস্ক বা এয়ার পিউরিফায়ার কেনার কথা তারা বলতে পারেন অনায়াসেই।”

“অথচ তাদেরই জীবনযাত্রায় যখন এর জন্য ছোটখাটো পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়, তারাই আবার বেঁকে বসেন”, আক্ষেপের সুরে বলছিলেন মিস রায়চৌধুরী।

ফলে রেকর্ড দূষণে হাঁসফাঁস করলেও দিল্লিতে সরকার বা নাগরিকরা কিন্তু এখনও একমত হতে পারছেন না এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের পথ কী!

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com