শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

কালো টাকা পুনরুদ্ধারে ১২টি দেশের সাথে চুক্তির পরিকল্পনা ঢাকার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০
  • ২২২ বার

কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার বিদেশে জমানো কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রায় ১২টি দেশের সাথে ‘ইন ট্যাক্সেশন এগ্রিমেন্ট’ করার পরিকল্পনা করছে। দেশগুলো হলো- কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ এবং ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ।

সূত্র অনুযায়ী, এই অর্থ ফেরত আনতে ঢাকা দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে এবং এই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি সরকার একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান হিসেবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কমিটির সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে।

কমিটির সূত্র জানায়, পৃথক কর ফাঁকির মামলার পর্যালোচনা করে এবং ট্যাক্স হ্যাভেন (ট্যাক্সের হার খুব কম) দেশগুলোর সাথে তথ্যের আদান-প্রদানের সুবিধার্থে নীতিমালা তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যকর উপায়ের মাধ্যমে কালো টাকা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

এছাড়া বিএফআইইউ এই ১২টি দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে ওয়ার্কিং কমিটি সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব এম আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি অনলাইন বৈঠকে বিএফআইইউয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে।

সূত্র জানায়, সেই বৈঠকে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে কি পরিমাণ কালো টাকা জমা রাখা হয়েছে তা নির্ধারণের জন্য একটি ডাটাবেস প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সাথে এগুলো ফিরিয়ে আনার প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত এবং ভবিষ্যতে অর্থ পাচার রোধে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের বার্ষিক সম্মেলনটি এই বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে এটি বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ মানি লন্ডারিংয়ের অর্থ ফেরত আনতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সহায়তা চাইবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সভায় অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে কার্যনির্বাহী কমিটি বিদেশি দেশগুলোকে অর্থ প্রক্রিয়ার উত্স সম্পর্কে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য চাইতে পারে এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানায়। যা অর্থ পাচার আটকাতে কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।

সূত্র জানায়, কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সক্ষমতা ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

কমিটি ট্যাক্স না দেয়া এবং বিদেশে কালো টাকা থাকা লোকদের সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং কর পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছে। তারা পণ্য, পরিষেবা ও চালানের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিতে বহুমাত্রিক চালান এবং রপ্তানি পণ্য ও পরিষেবাদিতে গরমিলের তথ্য না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করার আহ্বান জানান।

মার্চ মাসে প্রকাশিত গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি’র (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মূল্য ঘোষণার গরমিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৬৩ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা (৭.৫৩ বিলিয়ন ডলার) লোকসান দিয়েছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ২.৩৮ শতাংশ কম। ২০১৮ সাল শেষে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা।ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com