মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে রাতের আধার ঘনিয়ে আসা পর্যন্ত নামাজ কায়েম কর আর প্রভাতে কোরআন পড়াকে গুরুত্ব প্রদান করো। প্রভাতে কোরআন পাঠ নিশ্চয়ই এমন যে তা সাক্ষ্য প্রদান করে থাকে, আর রাতের এক অংশেও তার (কোরআন পাঠের) সঙ্গে তাহাজ্জদ পড়তে থাকো।
এটা তোমাদের জন্য হবে নফল বিশেষ। আশা করা যায় তোমার প্রভু প্রতিপালক তোমাকে এক বিশেষ প্রশংসনীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৭৮-৭৯)।
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের পদ্ধতি আমাদেরকে শেখানো হয়েছে। আমরা যদি তার নৈকট্য লাভ করতে চাই তাহলে আমাদেরকে নীরবে একনিষ্ঠ হয়ে তার কাছে কান্নাকাটি করে আমাদের পাপসমূহের ক্ষমা চাইতে হবে।
আল্লাহপাক ক্ষমাশীল, তিনি চাইলে আমাদের ক্ষমা করতে পারেন, আমাদের কাজ হচ্ছে ক্ষমা চাইতে থাকা আর দোয়া করতে থাকা। দোয়া করার উত্তম একটি সময় হল গভীর রাত অর্থাৎ তাহাজ্জদের সময়।
হাদিসে এসেছে, হজরত বেলাল (রা.) বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তাহাজ্জদ নামাজ তোমাদের নিয়মিতভাবে পড়া উচিত, কেননা এটা অতীতকালের সৎকর্মশীলদের পদ্ধতি ছিল এবং স্রষ্টার নৈকট্য লাভের মাধ্যম ছিল। এই অভ্যাস পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে, মন্দকর্ম দূর করে আর শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে’ (তিরমিযি, আবওয়াবুদ দাওয়াত)।
অপর একটি হাদিসে রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতে শেষ প্রহর যখন আসে আল্লাহতায়ালা তখন পৃথিবী সকাশে অবতরণ করেন আর বলেন, আছে কী কেউ? যে আমার কাছে দোয়া যাচনা করবে আর আমি তার দোয়া কবুল করবো।
কেউ কী আছে? যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আর আমি তাকে মার্জনা করবো। কেউ কী আছে? আছে সে তার নিজের দু:খ ক্লেশ দূর করার জন্য দোয়া করলে আমি দু:খ ক্লেশ বিদূরিত করবো। এভাবে আল্লাহতায়ালার এই আহবান করা (ততক্ষণ পর্যন্ত) চলতেই থাকে এমন কি সুবেহ সাদেক-প্রভাতের আলোক রেখা ফুটে ওঠে’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ২য় খন্ড, পৃ. ৫২১, বৈরুতে মৃদ্রিত)।
অপর আরেকটি হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) এক প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, যে আমার দোস্তের সঙ্গে দুশমনি করেছে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমার বান্দা, যতটা আমার নৈকট্য, যা কিছু আমার পছন্দ আর আমি (যেসব) তাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছি, তা থেকে লাভ করতে সক্ষম হবে, ততটা অন্য আর কিছু থেকে লাভ করতে পারবে না।
আরো নফলের মাধ্যমে আমার বান্দা আমার এমন নিকটতর হয়ে যায় যে, আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করে দিই। আর আমি তাকে যখন নিজের দোস্ত বানিয়ে নেই তখন তার কান হয়ে যাই যদ্বারা সে শুনে, চোখ বনে যাই যাই যদ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যদ্বারা সে ধরে রাখে, তার পা হয়ে যাই যদ্বারা সে চলা-ফেরো করে, অর্থাৎ আমি-ই তার রূপকার-নির্মিতা।
আমার কাছে চাইলেই আমি তাকে দিই, সে আমার কাছে আশ্রয় যাচনা করলে আমি তাঁকে নিরাপদ আশ্রয় দান করি’ (বোখারি)।
হজরত আবু হুরায়ারা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহতায়ালা রহম করুন যে রাতের বেলায় জেগে ওঠে ও নামাজ পড়ে আর প্রিয়তমা স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয়। সে (স্ত্রী) জেগে ওঠতে গরিমসি করলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সজাগ হয়ে সে ওঠে পড়ে। অনুরূপভাবে আল্লাহতায়ালা সেই মহিলার প্রতিও রহম করুন, প্রথমে জেগে ওঠে, নামাজ পড়ে আর প্রিয়তম স্বামীকেও জাগিয়ে তুলে। স্বামী জেগে ওঠতে গড়িমসি করলে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সে জেগে ওঠে’ (আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত)।
আমাদের করণীয়-
নিষ্ঠার সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
রাতে উঠে একনিষ্ঠভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা আর আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করতে থাকা।
আল্লাহ ও রাসুলের শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনার চেষ্টা করা।
অসৎ পথ পরিত্যাগ করে সৎ পথে নিজে পরিচালনা করা।
সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে তার প্রকৃত শিক্ষা অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।
হে দয়াময় প্রভু! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে আপনার কৃপার চাদরে আবৃত করে নিন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট