কুয়াশা আর বিষাক্ত কালো ধোয়ার কারণে প্রতিবছরই শীতের সকালের সূর্য আংশিক অস্পষ্ট হয়ে চোখে ধরা পড়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। তবে শহরের সীমানা বরাবর এ বছরটি দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্যভাবেই আলাদা।
কৃষক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ভারত। হাজার হাজার কৃষক পায়ে হেঁটে এগিয়ে আসছেন দিল্লির দিকে৷ অবিলম্বে নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার করাই তাদের মূল দাবি।
গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির উত্তরপ্রান্তে এক বিশাল এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘বিপ্লবকে দীর্ঘজীবী হোক’সহ নানা প্রতিবাদি স্লোগানে বিক্ষোভ করছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা লাখো কৃষক।
নিজেদের কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর, ট্রলিতে করে কয়েক মাসের রেশন নিয়েই খোলা আকাশের নিচে শীতের রাতে তাঁবু টানিয়ে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দখলে রেখেছেন নতুন কৃষি বিলের বিরোধিতা করা এসকল কৃষক।
নয়াদিল্লি থেকে প্রায় ৩১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহর থেকে এই বিক্ষোভে অংশ নিতে আসা ৩১ বছর বয়সী কৃষক কলজিৎ সিং বলেন, ‘মোদি আমাদের জমিগুলো করপোরেশনগুলোর কাছে বিক্রি করতে চান। জীবনের চেয়েও নিজের মাটিকে যারা বেশি মূল্যবান বলে মনে করেন, দেশের এমন লাখ লাখ মানুষের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না তিনি (নরেন্দ্র মোদি), যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশের জন্য রক্ত ও ঘাম দিয়ে যাচ্ছেন।’
আনমল সিং (৩৩) নামে আরেকজন কৃষক বলেন, ‘নতুন যে কৃষি আইন করা হয়েছে সেটি মূলত কৃষকদের জমি বড় করপোরেশনগুলোর হাতে হস্তান্তর আমাদের ভূমিহীন করার একটি বড় পরিকল্পনার অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোদি চান দরিদ্র কৃষকরা ক্ষুধায় মারা যাক যাতে তিনি তার ধনী বন্ধুদের পেট ভরাতে পারেন। আমরা এখানে তার (মোদির) নিষ্ঠুর আদেশগুলোর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ লড়াই করতে এসেছি।’
এদিকে কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে তাদের সাথে কৃষি আইনের মতপার্থক্য নিরসনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলেও তা ‘সময়ের অপচয় করার প্রয়াস’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন কৃষকরা।
এ কারণে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুই পক্ষের আলোচনা। কৃষকদের দাবি, সরকারকে নতুন কৃষি আইন বাতিল এবং ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্য নিয়ে আইন করতে হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহারে রাজি না হলেও, ফসলে সর্বনিম্ন মূল্য ও স্থানীয় কৃষিবাজার নিয়ে কৃষকদের উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে সরকারের সাথে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় দিল্লি অভিমুখে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন দেশের নানা প্রান্তের আরও অনেক কৃষক। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সূত্র : ইউএনবি