মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর চেয়ে একদিনে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন করোনায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ২০০ বার

মার্কিনিদের কাছে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকারময় দিন। ওইদিন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সেন্টারের টুইট টাওয়ারে হত্যা করা হয়েছিল কমপক্ষে ২৯৭৭ জন সাধারণ মানুষকে। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল বিশ্ব বাণিজ্য সেন্টারকে। সেই ভয়াবহতাকে অতিক্রম করতে চলেছে এখন করোনা ভাইরাস। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, বুধবার সেখানে করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষ। ফলে নিউ ইয়র্কে ১১ই সেপ্টেম্বর নিয়ে যে আতঙ্ক মার্কিন জনমনে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে তাদের মধ্যে এখন তার চেয়েও বেশি আতঙ্ক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এবিসি।

এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা গেছেন কমপক্ষে দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ।

নেহা কসবা’র পরিবারও এমন ঘটনার শিকার।  তিনি একজন জেনারেল প্রাকটিশনার। বলেছেন, আমার পিতা রমেশ মারা গেছেন সেপ্টেম্বরে। তাকে যখন আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল, আমরা তার সঙ্গে সাক্ষাত পর্যন্ত করতে পারিনি। সেই বেদনা এখনও আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। ওই সময়ে তার পাশে থাকতে না পারার বেদনা আমাকে বেশি মর্মপীড়া দিচ্ছে। তার সঙ্গে যখনই ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে কথা হতো, তাও ছিল সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। অল্প কথা বলেই শেষ করতে হতো। কারণ, বাবা তখন আরো দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলেন। আসলে বাবা সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর তাই সব ফোনকলের উত্তর দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

নেহার পিতা রমেশ ৪০ দিন ছিলেন হাসপাতালে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি সময় ছিলেন ভেন্টিলেটরে। এর মধ্যে ৬ দিন তিনি কোনো সাড়া দেননি। নেহা বলেন, এ সময়টা প্রতিটি দিন আমাদের কাছে ছিল ৯/১১-এর মতো। ৯/১১ তে যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছেন, তা ভাবাও যেমন বিয়োগান্তক, তেমনি এই করোনাকালে প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছেন তাও একই রকম বিয়োগান্তক। ১০ মাস ধরে চলছে এই ধারা। এই ভাইরাস সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ তা এরই মধ্যে মানুষ অনুধাবন করতে পেরেছে।

প্রতিটি দিন অন্য দিনের রেকর্ড ভঙ্গ হচ্ছে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মতে, গত শুক্রবারে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন দুই লাখ ১৭ হাজার ৬৬৪ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক লাখ ৬ হাজার। কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্টের মতে, বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় এই সংখ্যা বেশি। উল্লেখ্য, বিভিন্ন হিসাবে বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার। স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, এই সংখ্যা আগামী বছরের শুরুতে বৃদ্ধি পেয়ে চার লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়াতে পারে। তাই থ্যাংকগিভিং হলিডে’কে কেন্দ্র করে তারা পারিবারিক মিলনমেলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বড়দিন উপলক্ষ্যে এভাবে মিলিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। নেব্রাস্কা মেডিকেল সেন্টারের চ্যান্সেলর ড. জেফ্রে গোল্ড বলেছেন, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনে কি ঘটতে যাচ্ছে তা বলে দেয়া যায়। মানুষ একস্থান থেকে অন্য স্থানে যাবে। বাড়বে সামাজিক মিলন। ঘটবে আরো অনেক কিছু। এসব নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন, আমিও।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক। ড. গোল্ডের বাড়ি নেব্রাস্কায়। জাতীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের যে হার, এই রাজ্যে সেই হার দিগুণ। মার্চ-এপ্রিলে উভয় উপকূলে দেখা দিয়েছিল এই সংক্রমণ। এখন দেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে দ্রুত বাড়ছে সংক্রমণ। তবে সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলো দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ফাইজার এবং মডার্নার টিকা আশা জাগিয়েছে। তাদের টিকা শতকরা কমপক্ষে ৯০ ভাগের বেশি বলে প্রমাণিত হয়েছে পরীক্ষায়। বিশ্বে প্রথমবারের মতো বৃটেনে গত মঙ্গলবার প্রথম করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। সেখানে ফাইজারের টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে বিশ্বের মধ্যে বৃটেনই প্রথম এই টিকা অনুমোদন করে। ওদিকে মডার্নার টিকাও দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার পথে। তবে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে অক্সফোর্ড আবিস্কৃত টিকা নিয়ে। তাদের সফলতার হার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ। দু’রকম পরীক্ষায় ভিন্ন ফল পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে আরো গবেষণা বা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com