বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন

যাদের পেছনে ফেলে ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ১৪৮ বার

বাংলাদেশে বর্তমান অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এমনি পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের ওই রিপোর্টটি শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। এতে মূলত সামনের বছর ও আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোনো দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে তার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী আর মাত্র সাত বছর পর চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০৩০ সালে ভারত হবে তৃতীয়। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ ওপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে। আর ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সিইবিআর বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বেশিরভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে চীন খুব কৌশলে করোনাভাইরাস দ্রুত ও কঠোরভাবে মোকাবেলার কারণে সামনের বছরগুলোতে পৌঁছে যাবে বেশ সুবিধেজনক অবস্থানে।

চীন যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে, সেটাকে সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছে গবেষকরা। কিন্তু সিইবিআর বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ওই প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর হয়েছে। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল, তার থেকে পাঁচ বছর আগে ২০২৮ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।

চীনের মতো একইভাবে বাংলাদেশ যেহেতু করোনাভাইরাসের মধ্যেও কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে, তাই সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধারাবাহিক ও জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশা করছে সিইবিআর।

সিইবিআর তাদের রিপোর্টে বলছে, করোনা মহামারি শুরুর আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল বেশ ভালো। দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে গড়ে এক শতাংশ হারে।

বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় করোনা যেভাবে ছড়িয়েছে সে তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ অনেক সীমিত রয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মারা গেছে সাত হাজার ৫২ জন। অর্থাৎ প্রতি এক লাখে মাত্র চারজন। যদিও ওই মহামারির কারণে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ছিল সীমিত তা সত্ত্বেও অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে। কারণ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

তবে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক আট শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আট দশমিক দুই শতাংশ।

সিইবিআর’র পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ২০২১ সাল হতে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটবে গড়ে ছয় দশমিক আট শতাংশ হারে। তবে এর পরের ১০ বছরে এই হার কিছুটা কমে গড়ে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ হবে।

সিইবিআর বলছে, ২০২০ হতে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি আছে ৪১ নম্বরে। কিন্তু ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হবে ২৫তম অর্থনৈতিক শক্তি।

২০২০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ১৩৯ ডলার। ওই হিসেবটা পিপিপি বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটিকে হিসেবে নিয়ে করা। বাংলাদেশকে এখন একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলে গণ্য করা হয়।

বাংলাদেশের নাটকীয় উত্থান

সিইবিআর’র সূচক অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো এক নম্বর শক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে চীন এবং জাপান। প্রথম দশটি দেশের তালিকায় এরপর ক্রমান্বয়ে আছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও কোরিয়া।

২০৩৫ সাল নাগাদ এই প্রথম দশটি দেশের তালিকা থেকে ঝরে যাবে ইতালি, কানাডা ও কোরিয়া। তাদের স্থলে প্রথম দশটি দেশের তালিকায় ঢুকবে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল ও রাশিয়া।

২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে তিনটি নতুন দেশ, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশ। বর্তমানে ভিয়েতনামের অবস্থান হবে ১৯, ফিলিপাইনের ২২ ও বাংলাদেশের ২৫।

এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্থানকেই সবচেয়ে নাটকীয় বলতে হবে। বর্তমান র‍্যাঙ্কিং ৪১ থেকে বহু দেশকে টপকে বাংলাদেশ পৌঁছাবে ২৫ নম্বরে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪। এর পাঁচ বছর পর ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতি। ২০৩৫ সালে ঢুকবে প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায়।

যেসব অর্থনীতিকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরা্ইল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান ও তাইওয়ান। বর্তমান বিশ্ব সূচকে ওই দেশগুলো বাংলাদেশের ওপরে, কারণ তাদের অর্থনীতি বাংলাদেশের চেয়ে বড়।

তবে মনে রাখতে হবে, এই সূচক তৈরি করা হয় কেবলমাত্র কোনো দেশের অর্থনীতির জিডিপির আকার দিয়ে। মানুষের মাথাপিছু আয় বা জীবনমান এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। আর বাংলাদেশ যেহেতু খুব জনবহুল একটি দেশ এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যা আরো বাড়বে। তাই অনেক দিক থেকেই পেছন ফেলে যাওয়া দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানে তখনো অনেক পার্থক্য থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com