১লা জানুয়ারি যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নাগরিক ও পণ্যের অবাধ চলাচল এবং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এটি যুক্তরাজ্যতো বটেই সমগ্র ইউরোপের মানুষেরই জীবনযাপন, কাজ এবং ভ্রমণে ব্যাপক প্রভাব পরবে। এরমধ্যে সবথেকে বড় ৭টি পরিবর্তন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
ইউরোপীয় ভ্রমণ আইনে পরিবর্তন
এখন থেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া কেবল মাত্র শেনজেন এরিয়াভুক্ত দেশগুলোতে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবে। এরমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশই রয়েছে। তবে প্রতি ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিনের জন্য এই ভিসাহীন ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যাবে। এছাড়া, আয়ারল্যান্ড ছাড়া এসব দেশ সফরে গেলে পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত ৬ মাস থাকতে হবে। ভ্রমণ ইন্স্যুরেন্স থাকতে হবে।
সীমান্তে ইইউভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য যে লাইন থাকে এখন সেখানে আর দাড়াতে পারবে না বৃটিশ নাগরিকরা। করোনাকালীন সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক গুরুত্বপূর্ন কাজ ছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোতে সফর করা যাবে না।
শুল্কমুক্ত কেনাকাটা বা শপিং চালু হবে
শীগগিরই উভয় পক্ষের মধ্যে চালু হচ্ছে শুল্কমুক্ত শপিং বা কেনাকাটা। ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো দেশ থেকে অনির্দিষ্ট পরিমাণ শপিং করতে পারবেন বৃটিশ নাগরিকরা এবং এতে কোনো শুল্ক প্রদান করতে হবে না। তবে তামাকজাত পণ্য ও এলকোহলজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বৃটিশ নাগরিকদের ইইউভুক্ত দেশে স্থায়ীভাবে থাকার আইন পরিবর্তন
কোনো বৃটিশ নাগরিক যদি এরইমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকেন তাহলে সমঝোতা অনুযায়ী তিনি সুরক্ষা পাবেন। তবে তারপরেও তাকে বর্তমান রাষ্ট্রের বিশেষ নিয়মগুলো জেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, হয়ত কোনো দেশে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র পুনরায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হতে পারে। ফ্রান্সে বসবাসরত বৃটিশ নাগরিকদের নতুন করে পারমিট নিতে হবে।
এছাড়া, কোনো বৃটিশ নাগরিক যদি নতুন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাস করতে চায় তাহলে তিনি আর আগের মতো কোনো আবেদন ছাড়াই বাস, কাজ করা, পড়াশুনা কিংবা অবস্থান করতে পারবেন না। অন্য সব দেশের মতোই আগে ভিসা আবেদন করতে হবে। তবে ভ্রমণের জন্য হলে এই পদ্ধতির প্রয়োজন নেই।
যুক্তরাজ্যে থাকা ইইউ নাগরিকদের জন্য নতুন নিয়ম
গত বছরের শেষ দিন পর্যন্ত ইইউ কিংবা আইসল্যান্ড, লিচটেনস্টেইন, নরওয়ে বা সুইজারল্যান্ডের যেসব নাগরিক বৃটেনে ছিলেন তারা এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। তবে এরপরেও থাকতে হলে তা বৃটিশ কর্তৃপক্ষের থেকে নিশ্চিত করে নিতে হবে।
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন
এখন থেকে বিদেশি নাগরিকদের জন্য নতুন পয়েন্টভিত্তিক অভিবাসন চালু করেছে বৃটেন। এরফলে ইইউভুক্ত এবং অন্য যে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকদের একইভাবে বিবেচনা করবে বৃটেন। শুধুমাত্র তাদেরকেই অভিবাসনে সুযোগ দেয়া হবে যারা বৃটেনের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। এছাড়া, শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও অন্যান্য পেশার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ভিন্ন অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
বাণিজ্যে জটিলতা বাড়ছে
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমত হয়েছে যে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক থাকছে না। একইসঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি। তারপরেও ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের আলাদা করে কাস্টমস ডিকলারেশন লাগবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বানিজ্যের ক্ষেত্রে যে ধরণের নিয়মনীতি প্রয়োগ করা হয় এখানেও সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ হবে। ফলে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য হলেও প্রচুর নথিপত্রের কাজ করতে হবে। যা সবমিলিয়ে বাণিজ্যকে জটিল করে তুলবে। এছাড়া, গাছের চারা, পশুপাখি এবং নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের জন্য আলাদা নিয়ম
যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড নিয়ে বিশেষ নিয়ম প্রয়োগে সম্মত হয়েছে। এর অধীনে ইইউভুক্ত রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড ও বৃটেনের অন্তর্ভুক্ত নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মাঝে কোনো সীমানা থাকবে না। এবং ইইউ থেকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো চেকপয়েন্টও থাকবে না। ইইউ থেকে প্রবেশ করা লরিগুলোতে কোনো পরিদর্শন করা হবে না। উল্টো, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস থেকে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে পণ্য গেলে সেগুলোতে নজরদারি করা হবে। খাদ্যপন্যের ক্ষেত্রে আলাদা করে নিশ্চিত করতে হবে সেগুলো ইইউর নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।