আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য এবং সহ-সম্পাদকের সংখ্যা নিয়ে অতীতে অনেক সমালোচনা হয়েছে। খোদ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই রসিকতা করে বলতেন, দেশের যেখানে যাই সেখানেই উপকমিটির সদস্য পাই। কিছুদিন আগে দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের মো. সাহেদকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তারের পর উপকমিটিগুলো নিয়ে ফের সমালোচনা শুরু হয়।
এরপর উপকমিটিতে ৩৫ জনের বেশি সদস্য করা যাবে না এবং বিতর্কিত কাউকে সদস্য করা হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট সম্পাদক ও চেয়ারম্যানকে নিতে হবে এমন হুশিয়ারিও দেওয়া হয়। যদিও ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য নির্ধারণে কিছুটা শিথিল ছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও উপকমিটিতে সদস্য সংখ্যা নির্ধারণে কোনো নির্দেশনাই মানা হচ্ছে না। যে যার মতো করে উপকমিটি দিচ্ছেন। কোনো কোনো কমিটিতে ৮০ জনেরও বেশি সদস্য রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপকমিটির সদস্য নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হলেও ৩৫ জনের মধ্যেই রাখতে হবে- এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের সময়কে বলেন, দলে ‘মাইম্যান’ সংস্কৃতি বাদ দেওয়ার কথা নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন। কিন্তু উপকমিটিতে নিজেদের লোকদের জায়গা দিয়ে মাইম্যান তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো উপকমিটিতে বিতর্কিতরাও আছেন। দলের শীর্ষপর্যায় থেকে উপকমিটিতে সদস্য অনূর্ধ্ব ৪০ জন করার কথা বললেও যে যার মতো করে কমিটি দিচ্ছেন।
দলের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান জানান, শিল্প ও বাণিজ্য, যুব ও ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ, বন ও পরিবেশ, মুক্তিযুদ্ধ, আইন, কৃষি ও সমবায়, মহিলা, সংস্কৃতি এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য উপকমিটিও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শুরুতে উপকমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অনূর্ধ্ব ৪০/৫০ জনের বেশি হবে না। সম্ভবত প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করেই উপকমিটি করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে যা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হলো- কোনো বিতর্কিত বা অযোগ্য ব্যক্তিকে ঠাঁই দেওয়া হচ্ছে না।
২০১২ সালে গঠিত আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে ৬৬ জন সহ-সম্পাদক ছিলেন। তবে পরের বছর অনানুষ্ঠানিকভাবে আরও কয়েকশ সহ-সম্পাদক নিয়োগ করা হয়। তখন দলে একটা আলোচনা ছিল আওয়ামী লীগে সহ-সম্পাদকের সংখ্যা কত তা কেউ জানে না। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা দেখা দেয়। সহ-সম্পাদক পদের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে পড়েন। ঢালাওভাবে সহ-সম্পাদক করায় অনেক সুযোগসন্ধানী ও দুষ্কৃতকারী দলে ঢুকে পড়ে।
এসব বিষয় উপলব্ধি করে গত বছর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সহ-সম্পাদক পদ বাদ দেওয়া হয়। তবে উপকমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এ উপকমিটিতে যারা থাকবেন, তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ছাড়া প্রত্যেকে কমিটির সদস্য হবেন। তবে কত সদস্যের কমিটি হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বলা হয়নি। এরই মধ্যে গত বছর আওয়ামী লীগের এক উপকমিটির সদস্য ‘প্রতারক’ সাহেদকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সম্পাদকম-লীর এক সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপকমিটির সদস্য ৩৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং এ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী আবদুস সবুর বলেন, আওয়ামী লীগ বড় সংগঠন। গত কমিটিতে অনেকে সফলভাবে কাজ করেছেন, তাদের বাদ দিলে সঠিক মূল্যায়ন হয় না। আবার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও দলীয় সংসদ সদস্যরা আছেন। দলের নেতাদেরও জায়গা দিতে হয়। এটা না দিতে পারলে অনেককে অবমূল্যায়ন করা হয়। ফলে উপকমিটিতে সদস্য সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।