সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

স্কুল বন্ধের ক্ষতি শিশুরা বইতে পারবে না : ইউনিসেফ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১
  • ১৭৫ বার

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে স্কুলের কার্যক্রম আরো এক বছর ব্যাহত হলে সে ক্ষতির ভার শিশুরা বইতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর।

তিনি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যেহেতু কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছি এবং বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, তাই স্কুলগুলো খোলা রাখতে বা পুনরায় খোলার পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দিতে কোনো প্রচেষ্টাই বাদ দেয়া উচিত হবে না।’

ইউনিসেফ প্রধান জানান, শিশুদের ওপর স্কুল বন্ধের বিরূপ প্রভাবের বিষয়ে অভূতপূর্ব প্রমাণ এবং স্কুলগুলো মহামারীর চালিকা শক্তি নয় বলে জোরালো নজির থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশই স্কুলগুলো বন্ধ রেখেছে তাও প্রায় এক বছর ধরে।

তিনি জানান, মহামারীর চূড়ান্ত পর্যায়ে লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বিশ্বব্যাপী ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যেখানে স্কুলগামী শিশুদের এক তৃতীয়াংশই দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি। ফলে স্কুলগুলো বন্ধ রাখায় তা বিপর্যয় নিয়ে এনেছে।

‘স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ বৃদ্ধি পেতে চলেছে। এটি এমন মাত্রায় বাড়ছে যা আমরা বিগত অনেক বছরেও দেখিনি। আথচ এটি কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা কঠোর লড়াই করেছি,’ বলেন তিনি।

হেনরিয়েটা ফোর উল্লেখ করেন যে শিশুদের পড়া, লেখা ও প্রাথমিক গাণিতিক সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একবিংশ শতাব্দীর অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনে যে দক্ষতার প্রয়োজন তা হ্রাস পেয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য, বিকাশ, নিরাপত্তা এবং সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের ওপর ক্ষতির পরিমাণ হবে সর্বাধিক।

স্কুল-কেন্দ্রিক খাবারের অভাবে শিশুরা ক্ষুধার্তই থেকে যাচ্ছে এবং এতে তাদের পুষ্টিগত অবস্থা খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সমবয়সীদের সাথে প্রতিদিনের যোগাযোগের অভাব এবং চলাফেরা কমে যাওয়ায় শিশুরা শারীরিক সুস্থতা হারাচ্ছে এবং তাদের মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। স্কুলগুলো প্রায়শই যে সুরক্ষা জাল নিশ্চিত করে তা না থাকলে তারা নির্যাতন, শিশুবিয়ে ও শিশুশ্রমের শিকার হওয়ার আরো বেশি ঝুঁকিতে পড়বে।

‘এ কারণেই অন্য সব বিকল্প বিবেচনা করার পরেই সর্বশেষ উপায় হিসেবেই স্কুলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত,’ বলেন তিনি।

স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণের ঝুঁকি নিরূপণ মূল নির্ধারক হওয়া উচিত জানিয়ে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক বলেন, যখনই সম্ভব দেশজুড়ে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত পরিহার করা উচিত। যেসব স্থানে উচ্চ মাত্রায় কমিউনিটি সংক্রমণ রয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম চাপের মধ্যে রয়েছে এবং যেখানে স্কুল বন্ধ রাখা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, সেসব স্থানে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ সুরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে- যেসব শিশু তাদের বাড়িতে সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে, যারা স্কুল টিফিন বা আহারের ওপর নির্ভরশীল এবং যাদের বাবা-মাকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়, তাদের শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, লকডাউনের ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিতে শুরু করার পর প্রথমেই যে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেবে তার মধ্যে অবশ্যই স্কুল থাকা উচিত। দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না পারা শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য ঘাটতি পূরণে বাড়তি ক্লাস নেয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

যদি আরো এক বছর শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তবে প্রজন্মান্তরে তার ফল ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেন হেনরিয়েটা ফোর।

সূত্র: ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com