আদালতে বিচারাধীন থাকায় গ্রামীণফোনের কাছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিষয়ে আদালতের বাইরে কোন মিমাংসা করা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতের বাইরে চলমান বিবাদ নিরসনে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে বিটিআরসিকে টেলিনর এশিয়ার পক্ষে প্রস্তাব দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন। পরে এই বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী রোববার (২৫ নভেম্বর) পরর্বতী তারিখ ঠিক করেন।
আদালতে আজ গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ ফজলে নূর তাপস। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন। অন্যদিকে বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মুরাদ রেজা ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
এ বিষয়ে খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু (বিটিআরসি) পাওনা নিয়ে নিষ্পত্তির বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে সেহেতু এটি অন্য কোনো মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করতে নিষেধ করেছেন আপিল বিভাগ।
তিনি বলেন, আদালতের বাইরে কোন অন্য কোন মধ্যস্ততার মাধ্যমে সালিশ (আরবিট্টেশন) করা যাবে না বলেছেন।
এর আগে গত (১৪ নভেম্বর) বিটিআরসির পাওনা টাকার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা শর্ত সাপেক্ষে দিতে রাজি হয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। সেদিনের শুনানি শেষে মামলায় আদেশের জন্য আজকের (১৮ নভেম্বর) দিন ধার্য ছিল আপিল বিভাগে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে তা জানতে চেয়ে ৩১ অক্টোবর আদেশের জন্য রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। কিন্তু সে হিসাব গ্রামীণফোন দিতে না পারায় দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছিল। আজ শুনানির নির্ধারিত দিনে গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দুই শত কোটি টাকা দিবে তবে, সেটা শর্ত সাপেক্ষে।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন আপাতত বিটিআরসিকে কত টাকা দিতে পারবে তা জানাতে বলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তারও আগে গত ১৭ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির পাওনা ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। পরে সে আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিটিআরসি।
এর আগে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি করে গ্রামীণফোনকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। এই চিঠির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গ্রামীণফোন নিম্ন আদালতে একটি মামলা করে। এরপর গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত গ্রামীণের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। পরে ওই আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে দুই মাসের জন্য গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।