মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কারণে নয়, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। কাজেই সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা তাদের প্রাপ্য। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দেওয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সোমবার তিনি এ ঘোষণা দেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক। সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বর্তমানে ৬ হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গুত্বের ধরনভেদে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি পাচ্ছেন। ৫ হাজার ৮১৬টি শহিদ পরিবার মাসে ৩০ হাজার, মৃত যুদ্ধাহত পরিবার ২৫ হাজার, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবার ৩৫ হাজার, বীর-উত্তম খেতাবধারী ২৫ হাজার, বীরবিক্রম খেতাবধারী ২০ হাজার এবং বীরপ্রতীক খেতাবধারীরা মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০ হাজার টাকা করার ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে সব মুক্তিযোদ্ধা এ সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধারা এর ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়। এ ধরনের মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্যা দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমরা আশা করব, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় মুক্তিযোদ্ধাদের এখন আর কারও কাছে ধরনা দিতে হবে না, এমআইএসের ভিত্তিতে টাকাটা সরাসরি যার প্রাপ্য, তার হাতে পৌঁছে যাবে। এর ফলে টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনোরকম হয়রানির শিকার হতে হবে না। এ ছাড়া ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের টেকসই আবাসন নিশ্চিত হবে। সরকার জাতির পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব ঘটেছে, যা অত্যন্ত ঘৃণিত বিষয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ যাতে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।