শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমারে বিক্ষোভে নিহত নারীর প্রতি শ্রদ্ধায় হাজারো মানুষ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ১৫৮ বার

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত তরুণীর শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। রোববার রাজধানী নেপিডোতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইং মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আর কিছুদিন পরই তার ২০তম জন্মদিন ছিল।

ওই বিক্ষোভে কমপক্ষে তিনজন নিহত হন।

রোববার হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নিহত ওই তরুণীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

অনেকেই তিন আঙ্গুলের সালাম ঠুকে সম্মান জানান, বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনে এই প্রতীক ব্যবহার করে আসছে।

চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

প্রথমদিকে আগাম নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিক্ষোভকারীরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সুচি এবং তার জাতীয় লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের অন্যান্য সদস্যদের যেন মুক্তি দেয়া হয়।

সামরিক বাহিনী অভিযোগ করেছে যে গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার কারণে সুচি’র দল এনএলডির ভূমিধস জয় পেয়েছে। যদিও নির্বাচনে কারচুপির কোনো প্রমাণ সেনাবাহিনী দিতে পারেনি।

চলতি মাসের শুরুর দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সুপার মার্কেটের কর্মী মিয়া থোয়ে থোয়ে খাইং আহত হন।

তাকে ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল, তবে শুক্রবার তিনি মারা যান।

এরপর থেকেই ওই তরুণী বিক্ষোভ সমাবেশের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

যারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অনেকেই ওই তরুণীর ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করছেন।

তার লাশ বহনকারী কফিনটি একটি কালো ও সোনালী রঙের গাড়িতে তুলে রাস্তায় চালিয়ে নেয়া হয়।

ওই সময় গাড়িটির সাথে কমপক্ষে কয়েকশো মোটরবাইক ছিল।

দেশটিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে গতকাল সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনাটি ঘটেছে।

এরপরও রোববার সারা দেশে অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনকারীরা আবারো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুড়লে দু’জন প্রতিবাদকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এই মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দার জন্ম দেয়।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ, ভয় দেখানো ও হয়রানি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এছাড়া রোববার দেশটির বিশিষ্ট অভিনেতা লু মিনের স্ত্রী জানিয়েছেন, সামরিক নেতৃত্বের নিন্দা জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করার পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

প্রতিদিন বিক্ষোভ বাড়ছে

বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংবাদদাতা জোনাথন হেডের বিশ্লেষণ

মিয়ানমারে দুই সপ্তাহ ধরে চলা নাগরিক আন্দোলনে এখন শহীদ যুক্ত হয়েছেন – তাদের ছবি সারাদেশের বিক্ষোভ সমাবেশে পোস্টার, পেইন্টিং এবং কার্টুন চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হচ্ছে।

তাদের মৃত্যু সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আবার মানুষকে এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এই বিক্ষোভ প্রতিবাদের জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

এখন পরিকল্পনা হল, আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনের বিক্ষোভকে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে পরিণত করা।

ইতোমধ্যে কোভিড মহামারীর কারণে দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরমধ্যে ধর্মঘট শুরু হলে তা আরও আরও প্রকট হবে।

তবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকদের উপর এর প্রভাব কেমন হবে সেটা ধারণা করা বেশ কঠিন।

সেনা চালিত নিউজ সাইট ব্লক করেছে ফেসবুক

পর্যবেক্ষণ দল নেটব্লকস জানিয়েছে, মিয়ানমারে গত দুই সপ্তাহ ধরে রাত্রিকালীন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

গণবিক্ষোভ দমন করার লক্ষ্যে দেশটির সামরিক জান্তা নিয়মিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লক করে চলছে।

এর আগে বহুল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত একটি নিউজ সাইট ডিলিট করে দেয়।

সংস্থাটি বলছে, ‘বৈশ্বিক নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ফেসবুক থেকে তাতমাডাও ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম নামের পেইজটি সরিয়ে ফেলেছি। কারণ এই পেইজটি আমাদের সম্প্রদায়ের সম্মান বারবার লঙ্ঘন করার পাশাপাশি সহিংসতা উস্কে দিয়েছে ও ক্ষতির কারণ হয়েছে।’

সাইটটি সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত প্রধান সংবাদমাধ্যম ছিল।

এই সাইট থেকে বিক্ষোভকারীদের সতর্কতা জারি করা হতো এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তাদের অভিযোগের বিষয়টিও সেখানে তুলে ধরা হতো।

মিয়ানমারে তথ্য এবং সংবাদের প্রাথমিক উৎস হল ফেসবুক। দেশটির পাঁচ কোটি ৪০ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং লাইংসহ অন্যান্য শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com