প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি দায়ের (জিডি) করা হয়েছে। এরশাদের ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আখতার জিডিটি করেন। এরশাদের বাসভবনে বিদিশার অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগ তুলে আজ শনিবার সন্ধ্যায় গুলশান থানায় এ জিডিটি করা হয়।
জিডিতে বলা হয়েছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্ক যথারীতি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ট্রাস্টের ওই বাসায় গত ১৪ নভেম্বর প্রয়াত এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক সম্পূর্ণ অন্যায় ও অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। ওই জমিতে বিদিশা সিদ্দিকের প্রবেশ করার আইনগত কোনো অধিকার নেই বলেও উল্লেখ করা হয় জিডিতে।
এর আগে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আখতার দাবি করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পার্কে বিদিশার প্রবেশ অবৈধ। সেখানে তার থাকার কোনো অধিকার নেই। ট্রাস্টের নিয়ম অনুযায়ী এরিক এরশাদ তার মা বিদিশাকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করতে পারবেন না। এরিকের এখানে চাওয়ার কোনো এখতিয়ার নাই। এরিকের সমুদয় দায়িত্ব ট্রাস্টের। আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন, এটা তার নিজস্ব বক্তব্য না।’
বিদিশার প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকে পড়াকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ আখ্যা দেন ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খালেদ আখতার। তিনি বলেন, ‘বিদিশার এ প্রবেশ অনধিকার প্রবেশ, বেআইনি। সেখানে (প্রেসিডেন্ট পার্কে) তাকে ঢোকানোর কোনো অধিকার এরিকের নাই। ট্রাস্টের যে ডকুমেন্ট, তার বাবা সে অধিকার তাকে দিয়ে যায় নাই। অন্যখানে থাকুক গে, এখানে থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘এরিকের দেখভালের দায়িত্ব ট্রাস্টের। ট্রাস্ট ডিসিশন নেবে, এখানে কে থাকবে। এরিক যদি মাকে নিয়ে থাকতে চায়, তবে অন্যখানে থাকতে পারবে, কিন্তু এখানে থাকতে পারবে না।’
গুলশান থানায় জিডির কথা তুলে ধরে খালেদ বলেন, ‘একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে অবস্থান করে বিদিশা সিদ্দিক জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান সম্পর্কে অনাকাঙ্ক্ষিত ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, তিনি এরিক এরশাদকে প্রভাবিত করে তাকে দিয়েও অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রচার করে আসছেন।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একবার অভিভাবকত্বের মামলা করে বিদিশা হেরে গেছে। এখন যদি সে মা হিসেবে আবার আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে আমরা দেখব আইনিভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেওয়া যায়।’
ছেলে এরিকের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বিদিশাও। সে বিষয়ে খালেদ আখতার বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমরা এখনও এরিকের অভিভাবক। বিদিশা এখন সাময়িক অবস্থান করছেন। সেটার তো কোনো আইনগত ভিত্তি নাই। এখন অভিভাবকত্ব নিয়ে তারা যদি আইনের দিকে যায়, আমরা মোকাবেলা করব।“
২০০৫ সালে এরশাদ ও বিদিশার বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০০৯ সালে এরিকের অভিভাবকত্বের দাবিতে আদালতে যান বিদিশা। পরে ২০১১ সালে আসে রায়। সে রায়ে হেরে যান বিদিশা। অটিস্টিক এরিক বড় হতে থাকেন এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে।
এরশাদ মারা যাওয়ার আগে এরিকের নামে এফডিআর, বারিধারার দূতাবাস রোডের প্রেসিডেন্ট পার্ক, গুলশানে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট, রংপুরের পল্লী নিবাস, একটি কোল্ড স্টোরেজ, কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে ইউএই মার্কেটে একটি দোকান রেখে গেছেন।
খালেদ আখতার জানান, এই সম্পত্তির অর্থমূল্য ’৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। প্রেসিডেন্ট পার্কের ফ্লাটসহ প্রয়াত এরশাদের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি এখন ট্রাষ্টের অধীনে। যা এরশাদপুত্র এরিকের ভরণ পোষণ ও জনকল্যাণে গঠিত হয়েছে বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেন তিনি।