বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন

নেতাদের প্রটোকল নিয়ে অসন্তোষ বিএনপিতে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১
  • ১৩০ বার

এবার জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রটোকল নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। গত ২ মার্চ প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পরে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের নাম লেখাকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে দলের নেতারা ভেতরে ভেতরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

এ অবস্থায় দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের প্রটোকল স্পষ্ট করার জোর দাবি উঠেছে। বিষয়টি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর পর বিষয়টি সুরাহা করতে দলের গঠনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ এক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন এ নিয়ে দলের মধ্যে নানা বিশ্লেষণ চলছে। আজ শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা, সেখানেও বিষয়টি উঠতে পারে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত ১ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ব্যানারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি না রাখাকে কেন্দ্র করে জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও তুমুল বিতর্ক হয়। নেতাকর্মীরা ব্যাপক সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। এর রেশ কাটতে না কাটতেই প্রটোকল নিয়ে নতুন অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলটিতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যসহ ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের কয়েক নেতা বলেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটি জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ পদে যিনি থাকেন তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবেও মহাসচিবের অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার কখনো কখনো মহাসচিব থাকা অবস্থাতেও চেয়ারপারসন বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে মহাসচিবের মতো কমিটি অনুমোদন দেওয়াসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। বিগত সময় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাও একই কাজ করেছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদার কিন্তু তিনি ভাইস চেয়ারম্যান নন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব চেয়ারপারসনের নির্দেশক্রমে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও অনুমোদন দিতে পারেন। বিগত সময় এটা হয়েছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের প্রত্যেক নেতার পদ অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং প্রটোকল স্পষ্ট করা উচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা আছে। দলের শৃঙ্খলার স্বার্থেই এটা করা উচিত।

স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতাদের কী প্রটোকল হবে এবং কী কাজ করবেন তা সুস্পষ্ট না থাকলে ভবিষ্যতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে করেন গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতির বাতাস কখন কোন দিকে বাঁক নেবে বলা মুশকিল। তাই ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনাপ্রবাহ থেকে শিক্ষা নিয়েই দলের স্বার্থে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে কিছু কাজ করা উচিত।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাউন্সিল সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে বলা আছে চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শদানের জন্য একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল থাকবে। তারা জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের পদমর্যাদার অধিকারী হবেন। আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দলের চেয়ারপারসন যখন যে দায়িত্ব দেন তা পালন করেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব একই সঙ্গে এখন বিএনপির দপ্তরেরও দায়িত্বে আছেন।

আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় থাকা ও সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে চলাসহ নানা অভিযোগে দলের একশ্রেণির নেতাদের ‘শাস্তিস্বরূপ’ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের পর চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদকে তখন থেকে ‘ডাম্পিং পোস্ট’ বলা হয়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচনের পর কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে পদ-পদবির আশায় বেশকিছু নেতা সক্রিয় হন। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, কিছু নেতা দল ভারী করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু যারা দলের সিনিয়র নেতা রয়েছেন তাদের পক্ষে তো মারামারি করা সম্ভব নয়। তার কথা হচ্ছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের কাজ হচ্ছে চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়া। কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও চেয়ারপারসনের অনুমতি নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমানে অবস্থা ভিন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন তাদেরও অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। বলা চলে কিছু নেতার স্বার্থে তাদেরও নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। এতে দলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ওই নেতা বলেন, পদোন্নতি, মৃত্যু, পদত্যাগজনিত কারণে ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৮-১০টি পদ শূন্য রয়েছে। কয়েকজন ছাড়া অন্যদের খুব একটা দেখাই যায় না।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেন। ওই অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করে ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরউত্তম জ্যেষ্ঠ নেতাদের বসিয়ে না রেখে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান। তার বক্তব্যকে উপস্থিত নেতাদের সমর্থন দিতে দেখা যায়। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যারা দল করেছেন তারা এখন অনেকটা বেকায়দায়। বর্তমান নেতৃত্ব তাদের মান-অভিমান ও ক্ষোভ বুঝতে না পারায় ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এ কথাগুলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাহস করে বলবেন তেমন নেতা নেই।

ওই নেতা বলেন, আগে দেখা যেত দলের ভাইস চেয়ারম্যানরা কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সভা সমাবেশে সভাপতিত্ব করতেন। এখন তাও হচ্ছে না। বলা চলে দলের কিছু নেতার কৌশলের কারণে ভাইস চেয়ারম্যানদের অনেকেই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। অথচ দল পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের পরামর্শ নিতে পারেন। দলের দুই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এখন মনে হচ্ছে দলের জন্য তারা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এক সময় খালেদা জিয়া তাদের পরামর্শে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সফল হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com