বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ থেকে ৫০ বছর আগে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। এখন আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যে লক্ষ্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেই আশা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘দেশে চলছে গণতন্ত্রের সঙ্কট। এটা শুধু বিএনপির না, সমগ্র জাতির সঙ্কট। গণতন্ত্র এখন আওয়ামী লীগের হাতে বন্দি।’
বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক বিএনপি’র বছরব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার ও মানবাধিকার নেই। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের মানুষ বর্তমানে ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে জিম্মি। এর কারণ হচ্ছে- আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী নয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাকিস্তানীদের মতো বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তারা রক্ষীবাহিনী গঠন করে যেভাবে নিপীড়ন করতো এখনও সেইভাবে করছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে কোনো একক ব্যক্তি বা দলের অবদান ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষ বিশেষ করে মওলানা ভাসানীসহ আরো কয়েকজন, শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল। কিন্তু তাদের কথা বলা হচ্ছে না। দেশে এখন সুবর্ণজয়ন্তী পালন হচ্ছে না, বরং মুজিব জন্মশতবর্ষ পালন হচ্ছে। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ নেই। এখানে শুধু কিছু আমলা এবং একজন মাত্র ব্যক্তিকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেশের নতুন প্রজন্মকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে ভ্রান্ত ইতিহাস জানাচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করে গেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের যত উন্নয়ন তার সূচনা করেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নেই। আমরা ন্যায়বিচার পাই না। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্যাতন করে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। সারাদেশে আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে এক লাখেরও বেশি মামলা। ৫০০ শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। সহস্রাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বহির্বিশ্বে দলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবাইকে আরও বেশি সংগঠিত হয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমরা আর বিভক্ত না হয়ে সংঘবদ্ধভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তুলি। একইসাথে বাংলাদেশে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন করতে হবে। বিএনপিতে কোনও গ্রুপ থাকতে পারে না। সবার একটাই গ্রুপ তা হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গ্রুপ।’
এশিয়া-প্যাসিফিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাকিরুল ইসলাম খান শাকিলের সভাপতিত্বে এবং এশিয়া প্যাসিফি বিএনপির সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী বাদলুর রহমানের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন ইউরোপীয় অঞ্চলের সমন্বয়ক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির সভাপতি আহমেদ আলী মুকিব প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, মালয়েশিয়া বিএনপির সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন, সহ জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের তিন শতাধিক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, সুবর্ণজয়ন্তীর থিম সং এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া শীর্ষক ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশন করা হয়। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।