ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরুদ্ধে হেফাজতের কর্মসূচি ও পরবর্তী ঘটনায় বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের মামলা, গ্রেপ্তার নির্যাতন সরকারের চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের-গ্রেপ্তারের ঘটনা সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগের চক্রান্তের একটা অংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটা সরকারেরই সাজানো। মূল্ উদ্দেশ্য হচ্ছে-বিএনপিকে আবার মামলা- মোকাদ্দমার জালে জড়ানো। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরিচালনায় বিএনপি যেভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সংগঠিত হচ্ছিল, আন্দোলন করছিল তা কী করে আবার একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া যায় তারই একটা অংশ।’
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর কথোপকথনে প্রচারিত অডিওটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী একজন কর্মরত আইনজীবী, একজন সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী (নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব) এবং সচেতন রাজনীতিক। কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার প্রশ্নই উঠতে পারেনা। এটা সম্পূর্নভাবে একটি ষড়যন্ত্রমূলক, সাজানো তৈরী করা এবং তাকে মিথ্যা দোষারোপ করার একটি জঘণ্য চক্রান্ত।’
২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে এবং সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৭ জনকে গুলি করে হত্যা এবং পরের দুই দিনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচিতে বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস সেল, গুলি করে মোট ২০ জনকে হত্যা জাতির জীবনে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। প্রমাণিত হয়েছে, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের বেআইনি ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রের সকল মূল্যবোধকে ধ্বংস করে, একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হীন চক্রান্ত করছে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে। গত কয়েক দিনের সরকারী বাহিনী ও পুলিশ কর্তৃক হত্যা, আওয়ামী এজেন্টদের দ্বারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এবং সারা দেশে আওয়ামী সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য অডিও নাটক সাজিয়ে আমাদের নারী নেত্রী নিপুন রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার, রিমান্ড নেওয়া ও সারা দেশে পুনরায় হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার হীন পরিকল্পনা করছে।’
এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন গুলো দেখলেই এটা স্পষ্ট হবে যে, মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বিরোধী দলকে পুনরায় মামলা মোকদ্দমায় বেড়া জালে আটকে গণতন্ত্র উদ্ধার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে ব্যহত করা, দমন করা।’
আবারও সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সংসদ নির্বাচনের আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।