হেফাজত ইসলামকে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের বিদ্যমান স্বস্তি এবং শান্তি বিনষ্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা যে অব্যাহত তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে তা সহনশীলতার সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে। নিজ দল ও সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উস্কানিদাতাদের তালিকা প্রস্তুত করে এদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’ জনগণের জানমালের সুরক্ষা দিতে শেখ হাসিনা সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আজ বুধবার সকালে নিজের সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন ও নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় যারা দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে বা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সতর্ক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের ধৈর্য ও সহনশীলতার একটা সীমা আছে। সীমা অতিক্রম করলে তার পরিনতি হবে ভয়াবহ।’
পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারানো গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড় করিয়েছেন ও দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছেন শক্ত ভীতের উপর। সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আছে বলেই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিপরীতে আওয়ামী লীগ এখনও দায়িত্বশীল আচরণ করছে, দেখাচ্ছে সহনশীলতা।’
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ জাতি, কোনো ধর্মান্ধতাকে সমর্থন দেয় না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে সে আগুনে আপনাদের হাত পুড়ে যাবে।’
দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ভূমি অফিসে আগুন দিয়ে জমি জমার গুরুত্বপূর্ণ দলিল, খতিয়ান, নামজারি রেকর্ড ছাই হয়ে গিয়েছে। ভূমির প্রয়োজনীয় দলিল নথিপত্রের অভাবে বংশপরম্পরায় মামলা-মোকদ্দমায় লড়তে হবে, সুতরাং যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ধ্বংসাত্মক আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার ঘৃণ্য খেলায় মত্ত হয়েছে। তাদের সাবধান করে দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আঘাত আসলে প্রতিঘাত করতে জানে এবং আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণও করতে জানে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেবেন না, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর অবমাননা জাতি আর সহ্য করবে না। বঙ্গবন্ধুর ছবি ও ভাস্কর্যের উপর যারা হামলা করেছে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাদের এ ধৃষ্টতার জবাব দেবে।’
ওবায়দুল কাদের সারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আগুন সন্ত্রাস ও অশুভ শক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করতে হবে।’
গতকাল ঢাকাসহ দেশের সবকটি সিটি করপোরেশনে জনস্বার্থে গণপরিবহন চালুর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, সে ব্যাপারে কেউ কেউ বিরুপ মন্তব্য করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরিবহন মালিক শ্রমিকদের কাছে নতি স্বীকার করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কেউ কেউ যে অভিযোগ করছে তা সঠিক নয়। জনগণের দাবীর মুখে জনস্বার্থে দুর্ভোগ কমাতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।’
দু’একদিনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস সার্ভিস চালুর ব্যাপারে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন যা মোটেও সত্য নয় বলেও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।