মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট এখন সবাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই গ্রহণ করে থাকেন। অনেকের ধারণা, সবগুলো ভিটামিনের সংমিশ্রণে তৈরি মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খেলেই বুঝি অসুস্থতা দূর হয়ে যাবে।
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে বাজারে প্রাপ্ত এসব হরেক রকমের ভিটামিন ট্যাবলেটের বেশিরভাগই কোনো কাজে আসে না। শুধু তা-ই নয়, অনেক ভিটামিন ট্যাবলেট শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
লন্ডনের সেন্ট জর্জ হাসপাতালের চিকিৎসকরা টানা ছয় বছর প্রায় আট হাজার লোকের ওপর গবেষণা চালানোর পর দেখতে পায় এ ধরনের ভিটামিন অনেকদিন ধরে খাওয়ার কারণে তাদের শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গবেষকরা বলেন, মানুষ দ্রুত শারীরিক গঠন সুন্দর বা সুস্থ হওয়ার জন্য এভাবে বাজে খরচ করে। তবে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হল, হূদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা আলঝেইমারের মতো মারাত্মক রোগের জন্যও অনেকে ভিটামিন ট্যাবলেট খায়।
মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটে বড়জোর দুই ডজন উপাদান থাকতে পারে। কিন্তু টাটকা শাক-সবজি আর ফলে রয়েছে অন্য আরও শতাধিক উপকারী যৌগ। তার মানে একখানা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খেলে বহু উপকারী যৌগ থেকে বঞ্চিত হবে শরীর। সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণগুলো থাকে বছরে ১২ দিন। প্রতিদিন ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে বড়জোর তা ১১ দিনে নামতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তা বছরে ২৮ দিন থেকে ২৪ দিন নামতে পারে।
আর তাই গবেষকদের সিদ্ধান্ত, ঠাণ্ডা লাগা হ্রাসের পরিমাণ যেহেতু নগণ্য সেহেতু সারা বছর ধরে ট্যাবলেট খেয়ে যাওয়ার কোন যুক্তি নেই। তাছাড়া সর্দি কাশির লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার পর ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে তাতে কোনো কাজই হবে না বলে তারা মনে করেন। মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেটেই অনেক রকমের ভিটামিন উপাদান থাকে। ভিটামিন ট্যাবলেটের মিথটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ গবেষকরা।
বাংলাদেশের প্রায় সব ফার্মেসি, ড্রাগস্টোর আর সুপার মার্কেটের তাক ভিটামিন ট্যাবলেটে বোঝাই। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, মাল্টিভিটামিন থরে থরে সাজানো। আর এর বিক্রেতারাও প্রেস্ক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি করেন ভিটামিনগুলো।ভিটামিন শরীরের জন্য অপরিহার্য হলেও তার নিজস্ব বা নিজের শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা নেই। কারও শরীরে যদি ভিটামিনের অভাব থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে সুষম ও পরিমিত খাবারের সঙ্গে ভিটামিন বা মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খেলে শক্তি উৎপন্ন বা বৃদ্ধি করে থাকে। তবে সেটা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।